এক সময়ের খরস্রোতা শিবসা নদী আজ গোচারণ ভূমি

আলমগীর হান্নান আলমগীর হান্নান খুলনা
প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ছবি: শিবসা নদীর বুকে গরু চরে বেড়াচ্ছে

কালের বিবর্তনে এক সময়ের খরস্রোতা শিবসা নদী আজ শুধুই স্মৃতি। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার শিববাটি থেকে সোলাদানা পর্যন্ত শিবসা নদী ভরাট হয়ে গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। খরস্রোতা এ শিবসা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ও নদী খননের দাবিতে প্রায় সময় উপজেলা পানি কমিটি, নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানালেও তা কাজে আসেনি।

জানা যায়, খুলনার নদ-নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম শিবসা নদী। কপোতাক্ষের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়েছে শিবসা। যা বহমান আকারে মিশেছে সুন্দরবনে। উপজেলার অন্যান্য নদ-নদীগুলোর সংযোগ রয়েছে শিবসার সঙ্গে। যার কারণে বৃহৎ এলাকার পানি সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে শিবসা।

পাইকগাছা পৌরসভার পাশ দিয়ে প্রবাহমান শিবসা নদী। তবে বিশাল দৈর্ঘ্যের এ নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটারই ভরাট হয়ে গেছে। তীব্র নাব্য সংকটে এ নদীতে এখন আর নৌকা চলাচল করতে দেখা যায় না। পাইকগাছার অন্তত তিন লাখ মানুষ শিবসা নদীর দুই পাড়ে বসবাস করছেন। ফসলি জমি ছাড়া নদীর তলদেশে পলি পড়ে উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

গত ৩ দশক আগেও ঐতিহ্যবাহী শিবসা নদীটির ছিল ভরা যৌবন। এলাকায় যখন অবকাঠামোগত উন্নয়নে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি তখন যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল শিবসা নদী। জেলা শহরে যাতায়াতসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সকল পণ্য আনা-নেওয়ার অন্যতম মাধ্যমও ছিল এ নদীটি। জেলে সম্প্রদায়সহ শত শত নিম্ন আয়ের পরিবার নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যবাহী নদীটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। পলি জমতে জমতে শিববাটি থেকে সোলাদানার ত্রিমোহনী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদী সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।

এক সময়ের খরস্রোতা শিবসা নদী আজ গোচারণ ভূমি

পাইকগাছা পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার গদাইপুর, লতা, সোলাদানা, দেলুটি, লস্কর ও গড়ুইখালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শিবসা নদী। অনেকে নদীর জায়গায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। যে কারণে দিন দিন নদীর জায়গা কমছে। নদীর তলদেশে পলি পড়ে উঁচু হয়েও ভরাট হচ্ছে। এছাড়া নদীর জমি দখল করে চিংড়ি ঘের করেছেন অনেক প্রভাবশালী।

পৌর সদরের অনেক দোকানদার বলেন, পাইকগাছার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ নদীর অবদান অনেক। এই নদী দিয়ে কম খরচে মালামাল আনা-নেওয়া হতো। কিন্তু নদী ভরাট হওয়ার কারণে ট্রাকে করে মালামাল আনতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী পরিচালক রাজু হাওলাদার জানান, নদী খনন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা সমাধানের উপায় নেই। খননের জন্য জরিপ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।

এ ব্যাপারে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই নদীটি খননের দাবি জানিয়েছেন উপজেলাবাসী।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।