ঠাকুরগাঁও

প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে নদীর তীরে চলছে রিসোর্ট নির্মাণ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে নদী ভরাট করে রিসোর্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও সেটির তোয়াক্কা করছে না মালিকপক্ষ। এদিকে নির্মাণ বন্ধ ও নদী ভরাট না করতে স্থানীয় কৃষকরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার মোহম্মদপুর ইউনিয়নের ফেরসাডাঙ্গী ব্রিজের নিচের টাঙ্গন নদীর অনেকটা অংশ ভরাট করে শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেড নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করে এবং নদীকে সংকীর্ণ করে বাঁধ নির্মাণের জন্য ধার তৈরি করা হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ আরও বাড়লে আশপাশের কৃষিজমিগুলো নদীগর্ভে চলে যাবে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দ মুহাম্মদ আলী হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ রিসোর্ট নির্মাণ করছেন। তিনি শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান। নদীর পাশে তার নিজস্ব জমিও রয়েছে। প্রকল্প শুরুর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে নদী মাপজোকের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেছিলেন তিনি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান নদীর সীমানা নির্ধারণ ও সরকারি স্বার্থ রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করে দেন। এ কমিটি মাপজোক করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই রিসোর্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন।

প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে নদীর তীরে চলছে রিসোর্ট নির্মাণ

হাসান আলী নামে এক কৃষক বলেন, নদীর ওপর রিসোর্ট হলে বন্যায় আমাদের সব জমি ধসে যাবে। যদি কোনো বিত্তবান রিসোর্ট করতে চান তাহলে যেন নদী মাপজোক করে সেটি করেন।

ঢাবির শিক্ষার্থী সুজন চৌধুরী বলেন, এলাকায় অবকাঠামো গত উন্নয়ন হবে এটা ভালো। কিন্তু এখানকার গরিব মানুষদের ঘরবাড়ি ও কৃষিজমির কথাও ভাবতে হবে। নদীর মাপজোক না করে কীভাবে রিসোর্টের নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে?

হামিদুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, দীর্ঘদিন নদীর ধারে বসবাস করে আছি। বর্ষায় টাঙ্গন খুব ফুলে ওঠে। এমন অবস্থায় নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করা হলে গোটাগ্রাম নদীতে চলে যাবে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোহাগ বলেন, নিয়মনীতি অনুসরণ করেই স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। নদী ভরাট করে কৃষকের বা ব্রিজের ক্ষতি হোক এমন কাজ করা যাবে না। নিশ্চয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেবেন।

প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে নদীর তীরে চলছে রিসোর্ট নির্মাণ

শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আলী হুসেন বলেন, নিজস্ব জমিতে রিসোর্ট নির্মাণ করছি। নদী ও ব্রিজের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রেখেই কাজ করছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম জাকারিয়া বলেন, নদী মাপজোকের জন্য একটি কমিটি হয়ে। কিন্তু এখনো মাপজোক হয়নি। তার আগেই কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এটা অন্যায়।

গঠিত কমিটির সদস্য ও উপজেলা ভূমি সহকারী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আমরা স্থাপনা পরিদর্শন করেছি। মাপজোকের আগেই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কাজ চলমান রেখেছে। কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান বলেন, রিসোর্ট নির্মাণের জন্য একটি আবেদন পেয়েছি। সেই অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সমন্বয় করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবেদন দিয়েই নাকি মাটি ভরাট ও নির্মাণকাজ চলছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

তানভীর হাসান তানু/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।