এসএসসির প্রবেশপত্র না পেয়ে বিক্ষোভ, আশ্বাসে মুক্ত প্রধান শিক্ষক
শেরপুরের শ্রীবরদীতে গবরীকুড়া আকন্দ কলম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসির প্রবেশপত্র পায়নি ১৪ শিক্ষার্থী। এতে প্রধান শিক্ষককে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আশ্বাসে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের পুলিশি পাহারায় স্কুল থেকে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টায় তাদেরকে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। বিক্ষোভ চলাকালে গাফিলতির অভিযোগে সহকারী শিক্ষক জুলফিকার হায়দার রিন্টু ও অফিস সহকারী (কেরানী) শাহিনুর সেলিমকে বহিষ্কার ও সাজার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। অফিস সহকারী (কেরানী) শাহিনুর সেলিম ও সহকারী শিক্ষক জুলফিকার হায়দার রিন্টুকে ফর্ম ফিলাপের পুরো টাকা দিয়েও প্রবেশপত্র মেলেনি ১৪ শিক্ষার্থীর। গেলো মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিদায় অনুষ্ঠানে ৬৭ শিক্ষার্থীর মধে ৫৩ জনকে দেওয়া হয় প্রবেশপত্র। বাকি ১৪ জনকে বুধবার রাত পর্যন্ত প্রবেশপত্র না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এই ঘটনায় বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম জানায়, আমরা সময়মতো স্যারের কাছে টাকা জমা দিয়েও প্রবেশপত্র পেলাম না। সবাইকে কালকেই কার্ড দিছে। আমরা বাকি ছিলাম। আমাদেরকে দুইশো টাকা করে নিয়ে এসে আজ প্রবেশপত্র নিতে বলছিল স্যাররা। আজ সকাল থেকে এসে বসেছিলাম। তবুও পাইনি।
আরেক শিক্ষার্থী শরিফ মিয়া জানায়, রিন্টু স্যার আর সেলিম স্যারের কাছে কয়েকবার করে এডমিট কার্ড নিতে গেছি। স্যার ধমক দিয়ে সরিয়ে দিছে। পরে যখন সবাই উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, স্যাররা সুযোগ পেয়ে স্কুল থেকে পালিয়ে গেছে।
অভিভাবকরা বলছেন, স্কুল সভাপতি নইম উদ্দিন আকন্দের ছত্রছায়ায় অফিস সহকারী সেলিম এবং সহকারী শিক্ষক জুলফিকারের খামখেয়ালির কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, নইম উদ্দিন আকন্দ এই স্কুলে টানা ৩০ বছর ধরে সভাপতি পদে থেকে পুরো স্কুলটাকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন। শিক্ষক জুলফিকার হায়দার রিন্টু সভাপতির কথায় ওঠেন আর বসেন। আর রিন্টুর আধিপত্যের কারণে পুরো স্কুলই মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সবাই রিন্টু স্যারের কাছে জিম্মি।
অভিভাবক মোতালেব হোসেন বলেন, একটা শিক্ষার্থীর স্বপ্নের দুয়ার হলো এসএসসি। দশ বছর পড়াশুনার পর এই পরীক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ দুই একজন স্যারের খামখেয়ালির বলি হলো এই শিক্ষার্থীরা।
সন্ধ্যার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয় বিদ্যালয়ে। রাত আটটার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলে যান। এ সময় অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠকে বসলে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা হয়। শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর রাতেই ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয় প্রধান শিক্ষককে। পরে তাদের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধরা।
এ সময় শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল আকন্দ বলেন, জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হচ্ছে এসএসসি। যারা এডমিট কার্ড পায়নি, এটা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। উনারা আজ রাতেই যেতে বলেছেন। ডিসি এবং ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষককে ময়মনসিংহ পাঠানো হচ্ছে। আমি নিজেই তাদের সঙ্গে যাচ্ছি। আশা করছি, আমরা এডমিট কার্ড হাতে পাবো এবং শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে।
এদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। রাতের মধ্যে প্রবেশ পত্রের ব্যবস্থা না হলে, আবারো কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/এএসএম