অন্ধ আশিকুরের সঙ্গে ২১ বছরের সুখের সংসারের গল্প শোনালেন পারভীন
ভালোবাসার টানে অন্ধ প্রেমিককে বিয়ে করে ২১ বছর ধরে সংসার করছেন পারভীন বেগম। স্বামী অন্ধ হলেও এ নিয়ে তার কোনো দুঃখ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বামীকে ভালোবেসেই জীবন পার করতে চান তিনি।
অন্ধ স্বামীকে নিয়ে মাদারীপুর শকুনি লেকপাড়ে খেলনা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই দম্পতি। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসার জীবনে দুইজনেই আছেন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জের আ. জব্বারের মেয়ে পারভীন বেগম। এক সময় তিনি ঢাকায় তার এক মামা-মামির কাছে থাকতেন। ওই সময় ঢাকায় যান মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর গ্রামের ফজলুর রহমান সরদারের ছেলে সরদার আশিকুর রহমান। এক পর্যায়ে দুজনের পরিচয় হয়। এরপর হয় পরিণয়। অন্ধ জেনেও পারভীন ভালোবেসে ফেলেন আশিকুর রহমানকে। সেই প্রেমের সূত্র ধরে বাবা-মায়ের অমতেই মামা-মামির সহযোগিতায় বিয়ে করেন আশিকুরকে। বিয়ের পর ২১ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত পারভীনের বাবা-মা তার অন্ধ স্বামীকে মেনে নেননি। এতে দুঃখও নেই পারভীনের। ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে তিনি সুখেই আছেন।
২০০৩ সালে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে মাদারীপুরে চলে যান পারভীন। এরপর শহরের চৌরাস্তায় বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। তাদের সংসারে রয়েছে একমাত্র মেয়ে আফিয়া আক্তার আখি (১৮)। পছন্দমতো ছেলের সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
সরদার আশিকুর রহমানের ডাকনাম হেমায়েত। ১৯৯৫ সালে আন্ডারচর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেন। কবিতা লোখেন ও ভালো বাঁশিও বাজান তিনি।
সরদার আশিকুর রহমান বলেন, প্রায় ২৪ বছর আগে আমাকে কালকিনির একটি মামলায় সাক্ষী করা হয়। কিন্তু বিষয়টি আমি জানতাম না। তাই আদালতে সাক্ষ্যও দিইনি। এর কিছুদিন পর ঢাকা থেকে নিজগ্রামে আসার পর প্রতিপক্ষ আমার দু’চোখ তুলে ফেলে। এরপর ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। তখন ঢাকায় পারভীনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ভালোবেসে বিয়ে করি। অন্ধ জেনেও পারভীন ভালোবেসেই আমাকে বিয়ে করে। এখনও ভালোবেসেই পারভীন আমার কাছে আছে।
তিনি আরও বলেন, জীবনযুদ্ধে হারার মতো মানুষ আমি নই। তাই স্ত্রীকে নিয়ে শুরু করি নতুন জীবন। মাদারীপুর শহরের লেকপাড়ে স্ত্রী পারভীনকে নিয়ে খেলনা ও বাঁশি বিক্রি করি। বাঁশিতে সুর দিলে লেকে ঘুরতে আসা লোকজন মুগ্ধ হয়ে শোনেন, তা আমার খুব ভালো লাগে। লেকপাড়ে ঘুরতে আসা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আমার খেলনা কেনে। খেলনা বিক্রির টাকায় আমাদের দুইজনের সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। তাছাড়া পারভীন আমার যত্ন নেয়। আমাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করে। ভালোবেসে এভাবেই আমরা সারাজীবন থাকতে চাই।
পারভীন বেগম বলেন, ও (আশিকুর) অন্ধ জেনেই ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওর সঙ্গেই থাকতে চাই। আমার পরিবার এই বিয়ে না মানলেও আমি খুব ভালো আছি। ওকে নিয়েই আমি সুখি। এমন একজন মানুষের পাশে থাকতে পেরে সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করছি। খেলনা ও বাঁশি বিক্রির আয় দিয়ে আমাদের জীবন ভালোই চলছে।
লেকপাড়ে ঘুরতে আসা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমার নাতির জন্য খেলনা কিনতে এসেছি। খেলনা কিনলে আমি এখান থেকেই কিনি। আসলে এই দম্পতিকে দেখে ভালো লাগে।
মাদারীপুরের উন্নয়ন সংস্থা ‘দেশগ্রাম’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম বজলুর রহমান খান বলেন, বর্তমান যুগে অন্ধ স্বামীকে নিয়ে বছরের পর বছর পার করা প্রশংসনীয় ব্যাপার।
এফএ/এএসএম