সরিষায় লস, লিচুতে নতুন স্বপ্ন বুনছেন মৌচাষিরা
সরিষার মৌসুমজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে শত চেষ্টাতেও কাঙ্ক্ষিত মধু সংগ্রহ করতে পারেননি দিনাজপুরের মৌ খামারিরা। এতে এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখন লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার মৌচাষিরা।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় ২৭ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। প্রতিবছর দিনাজপুরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষার আবাদ হওয়ায় এই সরিষার ফুল থেকে বিপুল পরিমাণ মধু আহরণ করেন মৌচাষিরা। এবারও এই সরিষাক্ষেত থেকে মধু আহরণের ব্যাপক প্রস্তুতি নেন তারা। সরিষা ক্ষেতে স্থাপন করেন মৌ বাক্স।
কিন্তু মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত এবার লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ মধুও আহরণ করতে পারেননি মৌচাষিরা। সরিষার ভরা মৌসুমে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশা বিরাজ করে এবার। ঘন কুয়াশার কারণে এবং দীর্ঘ সময় রোদ না থাকায় সরিষা ফুলের পাপড়ি পচে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া সরিষাক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপন করা হলেও টানা শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র শীতের জন্য বাক্স থেকে মৌমাছি বের হতে পারেনি। ফলে মৌসুমের মধু সংগ্রহের জন্য দুই মাস সময় পার হয়ে গেলেও বৈরী আবহাওয়াার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী তারা মধু সংগ্রহ করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, বৈরী এই আবহাওয়ার জন্য হাজার হাজার মৌমাছি মরে গেছে।
তিনি বলেন, একদিকে কাঙ্ক্ষিত মধু আহরণ করতে না পারা এবং অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ মৌমাছি মরে যাওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন জেলার মৌ খামারিরা।
মৌ খামারি রাকিব হাসান রিফাত জানান, তার ৪০টি মৌ বাক্স ছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মৌমাছি মরে এখন অর্ধেক বক্সে পরিণত হয়েছে তার খামার।
তিনি বলেন, একটি মৌমাছির জন্ম হতে প্রায় ২২ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। মরে যাওয়া মৌমাছির সংখ্যা বাড়াতে তাকে বেশ বেগ পোহাতে হবে।
মৌচাষি রাকিব জানান, তিনি প্রথমে গাইবান্ধা, পরে বীরগঞ্জ এবং এখন হাকিমপুরের হিলিতে সরিষা ক্ষেতে খামার স্থাপন করছেন। সব মিলিয়ে তার ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মধুতো দূরের কথা, এই চার লাখ টাকাই তার ক্ষতি।
মৌ খামারি রাকিব হাসান রিফাত আরও জানান, সরিষায় এবার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন লিচুতে। যদি বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়া না হয়, তাহলে লিচুর মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে তারা এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিকের মৌমাছি পালন কর্মসূচির সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সরিষাক্ষেত থেকে এবার মৌ খামারিরা সন্তোষজনক মধু আহরণ করতে পারেননি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা।
তিনি বলেন, আগামী মাসে লিচুর মুকুল আসছে। তাই মৌচাষিদের বাক্স সংখ্যা বাড়িয়ে লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণ করে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবেন মৌচাষিরা।
রুহুল আমীন জানান, দিনাজপুর জেলায় তালিকাভুক্ত ৩০ জন মৌচাষি রয়েছেন। কিন্তু লিচুর সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেড় শতাধিক মৌচাষি আসেন মধু সংগ্রহ করতে। এই জেলায় মধু শিল্পের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
এফএ/জেআইএম