কাজেই আসছে না ১১ কোটি টাকার পানি শোধনাগার
অনেক আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু হচ্ছে না মুন্সিগঞ্জের ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্পটি হস্তান্তর নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দায় চাপাচ্ছে একে অপরের ওপর। নির্মাণকাজের মান নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পৌরসভা। সবমিলিয়ে ১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় মুন্সিগঞ্জ শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় ভৃ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর আয়তন প্রায় ৩৩০০ বর্গফুট। পরিকল্পনা ছিল শোধনাগারটির মাধ্যমে পাশের ধলেশ্বরী নদী থেকে প্রতিঘণ্টায় তিন লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করা হবে, যা সরবরাহ করা হবে পৌরবাসীর মধ্যে। তবে নির্মাণের শুরুতেই নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর কয়েক দফা পরিবর্তন করা হলে অবশেষে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। একই বছর পানির নমুনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সচল ছিল কয়েক মাস। তবে অদৃশ্য কারণে আবারও বন্ধ হয়ে যায় পানি বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রম।
সরেজমিন দেখা যায়, পানি শোধনাগারের প্রধান ফটক বন্ধ। নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পটি দেখাশোনার জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। কয়েক মাস চালুর পর অচল হয়ে পড়ে থাকায় প্রকল্পের পানি ও কাঠামোতে জমেছে শ্যাওলা। কোথাও পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে। প্রতীক্ষিত পানি শোধনাগারটি চালু না হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। তারা জানান, পৌরসভার হাটলক্ষ্মীগঞ্জসহ অনেক এলাকায় পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। লাইন ধরে পানি নিতে হয়। সেখানেও আয়রন থাকায় বিপত্তিতে পড়তে হয়। প্রতীক্ষিত প্রকল্পটি চালু করে দ্রুত সেবা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।
হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার সাকিব আহমেদ বাপ্পি বলেন, ‘কয়েকমাস পানি শোধনাগারটি চালিয়েছিল। আমরা বিশুদ্ধ পানির পাবো আশা করছিলাম। আবার বন্ধ এখন, তাহলে এতো টাকা দিয়ে এটি করে লাভ কী?’
স্থানীয় মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা ঠিকমতো বিশুদ্ধ পানিই পাইলাম না। একবার চালু হয়, আবার বন্ধ হয়। সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে মানুষ যদি উপকারই না পায় তাহলে এটা কার স্বার্থে করা হয়েছে?’
আমিনা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘তাড়াতাড়ি পানি শোধনাগাটি চালু করে দিলে আমরা সবাই বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবো। এটাই আমাদের দাবি।’
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রকৌশলী জাহিদ হাসান বলেন, শিডিউল অনুযায়ী তিন মাস পানি সরবরাহ করা হয়। এসময়ে বুঝে নেওয়ার কথা থাকলেও নেয়নি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কিংবা পৌরসভা। আমাদের নিজের ফান্ড থেকে এটি চালানোর আর সম্ভব নয়। এরইমধ্যে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। আমরা বারবার দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছে না। এমনকী আমাদের পাওনা টাকাও দিচ্ছে না।’
যোগাযোগ করা হলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রকল্পটি ঠিকাদার পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেবেন। এর বেশি কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার কথা জানান তিনি।
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সোহেল রানা রানু বলেন, পৌরসভার সাবেক মেয়র বারবার চেষ্টা করে ঠিকাদারকে দিয়ে বারবার নিম্নমানের পাইপ পরিবর্তন করেছেন। তারপরও কাজের মান নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন রয়েছে। এখন দেখা গেলো সেটা চালিয়ে আবার নতুন ঝামেলা হলো, তাই বিপত্তি এড়াতে ঠিকাদারকে আরও কিছুদিন পরীক্ষামূলক চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পৌরসভায় পানি শোধনাগারে ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই। ঠিকাদার আরও যদি কিছুদিন চালান, সফলভাবে পানি বিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা হয় তাহলে সেটি হস্তান্তর নেওয়া হবে।
এসআর/জিকেএস