নিয়ম-নীতির বালাই নেই মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর স্বাস্থ্যসেবার রোগীদের দ্বিতীয় ভরসা মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল। তবে শহরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে যেন নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। হাসপাতালটির অধিকাংশ চিকিৎসক ও কর্মী চাকরির চেয়ে বেশি মজেছেন ক্লিনিক বাণিজ্যে।

জানা গেছে, চিকিৎসকদের অনেকে আশপাশে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলেছেন। কেউ কেউ নিয়েছেন শেয়ার। নিয়মিত সরকারি বেতন তুললেও কর্মস্থলে তারা বেজায় অনিয়মিত। ব্যস্ত থাকেন রোগী ভাগিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে নিতে। আর সরকারি চাকরি করলেও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই একাকার হয়ে গেছেন দালালদের সঙ্গে। নানা অজুহাতে রোগী ভাগিয়ে করছেন কমিশন বাণিজ্য।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসকের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। সকাল ৮টায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বেলা ১১টায়ও দেখা মেলেনি চিকিৎসকের। তাই সকাল ৭টা বা তারও আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা রোগীরা রেগে আগুন। এমন সময় তাদের সামনে নানা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন কয়েকজন। তারা পাশের বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার নানা প্রলোভন দেখান। এতে সায় দেন নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। উপায়ান্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলে যান অনেক রোগী। এসময় কয়েকজনের নাম জানতে চাইলে তারা সটকে পড়েন। এরপর কয়েকজন চিকিৎসক একে একে প্রবেশ করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। তবে এ সংখ্যাও নগণ্য।

এদিকে, নিয়ম না থাকলেও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ৫০০ গজের মধ্যে ১০-১২টি বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক জাহিদুল কবীর সুজন, শারমিন হোসেন মৌমি ও মাহমুদ হোসেন রাজীব পরিচালনা করেন ঠনঠনিয়ার প্রাইম ক্লিনিক। একই এলাকায় নাস হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক ও শাজাহানপুরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোতারাফ হোসেন।

ডা. জাহিদুল কবীর বলেন, অফিস সময়ের বাইরে নিজের প্রতিষ্ঠানে সময় দেই। তাই আইনগত সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে এ ক্লিনিক ভালোই চলছে, দিনের অধিকাংশ সময় রোগীতে সরগরম থাকে।

অপরদিকে, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের দায়িত্ব থাকাবস্থায় রমরমা চললেও এখন নাস হাসপাতালে রোগীর টান পড়েছে বলে জানান ডা. মোতারাফ হোসেন।

তিনি বলেন, এখন আগের মতো আয়-ইনকাম হয় না। প্রতিষ্ঠান সরাসরি আমার নামে নেই। তাই আইনগত সমস্যা নেই।

jagonews24

তারা ছাড়াও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকের শেয়ার আছে আশপাশের কয়েকটি হাসপাতালে। এ কারণে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের নানা ছুতায় সেগুলোতে ভাগিয়ে নেওয়া হয়। এ কারণে কখনও ঠিক থাকে না মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রসহ অন্যান্য মেশিন। নিয়মিত পাওয়া যায় না চিকিৎসক।

হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসকদের উপস্থিতি দেখভালে নেই হাজিরার কোনো ব্যবস্থা। একটি রেজিস্ট্রি খাতা রয়েছে যেখানে যেকোনো সময় পুরো মাসের স্বাক্ষর বসিয়ে দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ কারণে কে উপস্থিত আর কে অনুপস্থিত তা শনাক্তের উপায় নেই।

বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বৃদ্ধা বলেন, এক দিন ঘুরে গেছি, আজও ডাক্তার পেলাম না। তাই এখন বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে যাচ্ছি।

ওই বৃদ্ধা মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রত্না রানী সরকারের কাছে এসেছিলেন। তবে পরপর দু’দিন অনুপস্থিত থাকার পরও বিভাগের চিকিৎসক রত্না রানী সরকারের দাবি তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকেন।

ডা. রত্না বলেন, একটা জরুরি কাজে দু’দিন যেতে পারিনি। একই অভিযোগ সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এস এম বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনিও দু’দিন থেকে অনুপস্থিত।

অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক জাহিদুল কবীর সুজন চেম্বারে আসেন বেলা ১১টায়। ডা. বেলাল ছুটিতে থাকার কথা বললেও এ বিষয়ে কিছু জানে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এভাবে হাসপাতালটিতে কর্মরত ৬২ চিকিৎসকের মধ্যে গড়ে অনিয়মিত ২০ জন।

এসব বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজি মিজানুর রহমান বলেন, চিকিৎসকরা কেন মাঝেমধ্যে ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত থাকছেন সে বিষয়ে তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিগগিরই ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হবে।

সিভিল সার্জন শফিউল আজম বলেন, সরকারি হাসপাতালে চাকরি করা অবস্থায় নিজস্ব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালানোর সুযোগ নেই। এমনটি কেউ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।