গাবুরায় নতুন বেড়িবাঁধ

খুশির মাঝেও মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নীরব কান্না

আহসানুর রহমান রাজিব
আহসানুর রহমান রাজিব আহসানুর রহমান রাজিব , সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার সুরক্ষায় মেগা প্রকল্পের আওতায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এতে উপকূলীয় এই ইউনিয়নে বসবাসকারীদের মধ্যে বইছে স্বস্তির হাওয়া। তবে চরম বিপাকে পড়েছে নদীর পাড়ের বাস্তুচ্যুত হাজারো পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা, চাঁদনীমুখা, হরিশখালি ও ডুমুরিয়াসহ বেশ কিছু এলাকার বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করা হাজারো পরিবারকে ঘরবাড়ি ভেঙে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় পরিবারগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। আশ্রয় হারানোর ভয়ে পরিবারগুলোতে পড়েছে কান্নার রোল। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন সেই চিন্তায় দিশাহারা পরিবারগুলো।

সরেজমিনে গাবুরার ৯নং সোরা ও চাঁদনীমুখা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারীদের অনেকেই তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে নিচ্ছেন। শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও সেখানে বিরাজ করছে এক নিষ্ঠুর নীরবতা।

তারা বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে কিছুই ছিল না। তাই বেড়িবাঁধের কোলে ঘর বেঁধে জীবন কাটছে। এভাবেই কেটেছে দুই প্রজন্ম। হঠাৎ ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে সবাই। এখন সবাই গৃহহারা। ছোট ছোট বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবো?

সোরা গ্রামের রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে এই বাঁধের পাশে আছি। এখন ঘর ভেঙে নিতে হচ্ছে। পাশের চরে একটা গুচ্ছগ্রাম করে দিলে আমাদের ঠাঁই হতো।

স্থানীয় বাসিন্দা মহিদুল গাজী জাগো নিউজকে বলেন, গাবুরায় মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর আমাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হচ্ছে। নিজের জমি না থাকার কারণে এতদিন বাঁধের পাশে বসবাস করতাম, এখন কোথায় আশ্রয় নেব?

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম বলেন, মেগা প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ নেই। তাদের জন্য বিকল্প একটি ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ করলে মানুষগুলো কষ্ট পেত না।

তিনি বলেন, নদীর চরে হাজার হাজার বিঘা খাস জমি পড়ে আছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি গাবুরার বাস্তুচ্যুত মানুষের কথা মাথায় রেখে একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে দেয়, তাহলে মানুষগুলো মাথা গোজার ঠাঁই পাবে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, এতদিন যারা বেড়ি বাঁধের পাশে পাউবোর জমিতে বসবাস করতেন তাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য আগেই কয়েক দফা নোটিশ করা হয়েছে। এখন নতুন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাস্তুচ্যুত মানুষদের সাময়িক কষ্ট হলেও উপকূল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ জরুরি।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ চলছে। ভূমিহীনদের বিষয়ে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সীদ্ধান্ত নেবেন।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।