৫ দিবসে শত কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছে গদখালী
ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে শত কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের স্বপ্ন বুনছেন ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীর চাষিরা। ফেব্রুয়ারিতে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস ঘিরে গোটা দেশেই থাকে অঢেল ফুলের চাহিদা। যার সিংহভাগ পূরণ করে যশোরের গদখালী।
কৃষি বিভাগ বলছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে গদখালী এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। যদিও কৃষকদের প্রত্যাশা, ফেব্রুয়ারিতেই তারা শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। এরইমধ্যে গোলাপ ক্ষেতের পঁচন রোগ থেকে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। আর এবার গদখালীতে ফুলের দামও বেশি।
এরইমধ্যে দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে বসন্তবরণ উৎসব। একইদিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বরস্বতী পূজা। এরপরই আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসগুলো উদযাপনে ফুলের বিকল্প নেই। তাই ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের ফুলচাষিরা নিচ্ছেন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ক্ষেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
মূলত এই তিন দিবস ঘিরে জমে উঠতে শুরু করেছে গদখালী ফুলবাজার। অন্য সময় থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় এসময় ফুলগাছের বাড়তি যত্ন নেন কৃষকরা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকারি বাজারে ফুলের দামও ততো বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ফুলচাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামনের এই তিন দিবসে অন্তত একশো কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এই অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১১ ধরনের ফুল।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সারাবছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে আসন্ন তিন দিবসকে ঘিরে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।
যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে গদখালী এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এরইমধ্যে ফেব্রুয়ারিতে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস ঘিরে ফুলের বাজার ধরার জন্য স্থানীয় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার ফুলের আবাদ ভালো হয়েছে, বাজারে দামও ভালো। এ কারণে এই দু’মাসে এই এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে আসন্ন দিবসগুলোর বাজার ধরতে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে আসছেন ফুলের পাইকারি গদখালী বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠছে ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’ধারে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসছেন কৃষকরা। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) গদখালি বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ২০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। প্রতিপিস রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১০-১২ টাকায়, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৬ টাকা, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। তবে কৃষক বলছেন, এবছর জারবেরার উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অপরিবর্তিত আছে।
ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ২০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। যা আগে ছিল ২০-২৫ টাকা। মালা গাঁথার জন্য চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে প্রতি ১০০ ফুল ২০০ টাকা। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতি হাজার ২৫০-৩০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০-১৫০ টাকা। লিলিয়াম প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। দুইদিন আগেও যার দাম ছিল ১০০ টাকা।
পানিসারা গ্রামের সোহান আড়াই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এবছর ফুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। ইজতেমার কারণে শুক্রবার দাম একটু কম আছে। জারবেরা ৮-১০ টাকায় বিক্রি করছি। আগামী দুই-তিন দিনে দাম আরও বাড়বে।
টাওরা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম ৯ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে গোলাপের দাম ছিল ৮-১০ টাকা। আজ ২০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।
হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফারুক হোসেন ৩০০ পিস গোলাপ বিক্রির জন্য এনেছিলেন। তিনি বলেন, প্রতি ১০০ ফুল তিনি বিক্রি করেছেন ১৯৫০ টাকা।
তিনি বলেন, ২ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি, এবছর পচন রোগের কারণে উৎপাদন কম। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
গদখালীর ফুল ব্যবসায়ী রনি আহমেদ বলেন, বাজারে গোলাপের খুবই সংকট। ভালোবাসা দিবসের আগের বাজারে ২৫ টাকায় ফুল পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাবে।
এফএ/এএসএম