প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে খুন
মরিয়মের মুখ বাঁধেন মা, লাঠি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন চাচা
জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা এবং চাচা মিলে শিশু মরিয়মকে হত্যা করেন বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম। মরিয়মকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তার চাচা।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের রামবল্লভ গ্রামে মরিয়ম হত্যার ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানানো হয়।
পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম জানান, মরিয়ম হত্যার ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তে নামে। মরিয়মের মা রিনা বেগম ও চাচা সেন্টু মৃধা জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়মকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত শনিবার সন্ধ্যায় রিনা বেগম মরিয়মকে পাশের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নতুন পোশাক পরিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে বাড়ির পাশের পরিত্যাক্ত ভিটায় নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ওড়না দিয়ে মরিয়মের মুখ বেঁধে রাখেন। পরে চাচা সেন্টু মৃধা মোটা শক্ত লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাথায় আঘাত করে মরিয়মকে হত্যা করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, মরিয়মকে হত্যার আলামত ঢাকতে মা রিনা বেগম রক্তাক্ত পোশাক নিয়ে পুকুরে নেমে সাঁতার জানা মরিয়মকে খুঁজতে থাকেন এবং মরিয়মের নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি বাড়ি না খুঁজে এলাকার মসজিদের মাইকে তার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া মরিয়মের মায়ের অসংলগ্ন আচরণ দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। মরিয়মকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত লাঠি ও ওড়না উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় দশমিনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সমির মল্লিকের কাছে মরিয়মের চাচা সেন্টু মৃধা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শনিবার রামবল্লভ অগ্রণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম (৮) বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রাত ৮টায় বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় মরিয়মের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন তার বাবা মকবুল মৃধা। এসময় শিশুটির মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল এবং গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ রাত ১২টায় মরিয়মের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত মরিয়মের বাবা মো. মকবুল মৃধা বলেন, পুলিশ বলেছে মরিয়মের মা রিনা বেগম ও আমার ভাই সেন্টু মৃধা মিলে মরিয়মকে হত্যা করেছে। ঘটনা সত্যি না মিথ্যা বুঝতে পারছি না। তবে তারা যদি সত্যি অপরাধী হয় তাহলে তাদের যেন কঠোর বিচার হয়।
এ বিষয়ে দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, মরিয়ম হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত রিনা বেগম ও চাচা সেন্টু মৃধাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
আব্দুস সালাম আরিফ/এফএ/জেআইএম