১০০ টাকায় গরুর মাংস-ভর্তা-ভাত মেলে লিটনের বাটিতে
অডিও শুনুন
একশ টাকায় গরুর মাংসের বাটি, সঙ্গে ফ্রি ভর্তা, ভাত, ডাল। লেবু, মরিচসহ ঢেকুর তুলে খাওয়া যায় অনায়েশে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। একশ টাকার এই বাটিতে দুপুরের খাবার পরিবেশন করে সাড়া ফেলেছেন লিটন খান নামের এক যুবক।
পিরোজপুর থেকে কাজের খোঁজে পাঁচ বছর আগে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে আসেন লিটন। গাড়িচালকের কাজে অভিজ্ঞ হলেও সেই পেশায় ভাগ্য ফেরেনি তার, তাই স্ত্রীর সহযোগিতায় সৈকতের ফটোগ্রাফার, ক্ষুদ্র দোকানি আর স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ভাসমানভাবে শুরু করেন কম টাকায় খাবারের আয়োজন।
পরিবারের চার সদস্যের সঙ্গে বাড়তি পাঁচজনের খাবার তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন লিটন। এরপর চাহিদা বাড়তে থাকে লিটনের বাটির খাবারের। বর্তমানে দুই-তিনশ বাটির চাহিদা থাকলেও স্ত্রীর সহযোগিতায় ১০০ বাটির বেশি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না লিটনের পক্ষে।
ভাসমান ব্যবসায়ী আর স্বল্প আয়ের মানুষে জন্য তার এ খাবার তৈরির আয়োজনটা শুরু হলেও এখন পর্যটক, স্থানীয় ব্যবসায়ী, ফটোগ্রাফার, ভ্যানচালকসহ সবাই খাচ্ছেন তার খাবার। দুপুর ১২টা থেকে শুরু করে ২টা পর্যন্ত তার এই খাবার বিক্রি হয়। তাই অনেকে পার্সেলও নিয়ে রাখেন। কারণ অগ্রীম দিয়ে না রাখলে সবসময় পাওয়া যায় না তার খাবার।
শুরুর দিকে কুয়াকাটা সৈকতের বালুর ওপর শুরু হলেও বর্তমানে কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদের পশ্চিম পাশে একটি তাবু দিয়ে তৈরি করা ঘরে বিক্রি হচ্ছে এই খাবার, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘লিটনের ভাত ঘর’। বড় একটি বাটিতে ভাত, তার ওপর গরুর মাংস, মাছ ও মুরগি রাখা। আরেকটি বাটিতে ভর্তা সাজানো। যে কারণে অনেকের কাছে ‘লিটনের বাটির খাবার’ নামেও পরিচিত এই দোকানটি।
চাহিদা থাকা সত্তেও কেন তিনি ১০০ বাটির উপরে তৈরি করেন না জানতে চাইলে লিটন বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনতে হয়। তাতে ১০০ টাকায় গরুর মাংস, ভাত ভর্তা খাওয়ানো সম্ভব না। তাই আমার স্ত্রী রান্না করে, আমি পরিবেশন করি। আমাদের পারিশ্রমিকের টাকাটাই শুধু থাকে। এটুকুই আমাদের ব্যবসা, কম হলেও যথেষ্ট।
তিনি আরও বলেন, আমি কম দামে দিতে পারি বলেই অনেক মানুষ আমার এখানে এসে খেয়ে যায়। যাদের সামর্থ্য কম তারাও খেতে পারে। এটা আমার কাছে ভালো লাগে। এটাকে আমি ব্যবসার পাশাপাশি একটি সেবামূলক কাজও মনে করি। কারণ অনেক গরিব মানুষ ১০০ টাকায় গরুর মাংস দিয়ে পেট ভরে খেতে পারে।
কুয়াকাটা সৈকতের স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ-জালাল মিয়া বলেন, আমাদের অনেকেরই বাসা একটু দূরে। প্রায়ই দুপুরের খাবার হোটেলে খেতে হয়। লিটনের বাটির খাবার আসার আগে দুপুরের খাবার খেতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে গুনতে হতো বাড়তি টাকা। এখন আর বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয় না।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক শাহিন বলেন, আমরা পরিবারের প্রায় ১০ জন লোক কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। আমার বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম লিটনের বাটির কথা, যেখানে ১০০ টাকায় গরুর মাংস, ৮০ টাকায় মুরগি এবং ৭০ টাকায় মাছ পাওয়া যায়। সঙ্গে ভাত-ভর্তা ফ্রি। আমরাতো অবাক আমরা গেলাম এবং খেলাম। স্বল্প খরচে এত সুন্দর খাবার, সত্যিই প্রশংসনীয়।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, কুয়াকাটায় সব শ্রেণির পর্যটক বেড়াতে আসেন। কম টাকায় খাবার খোঁজেন অনেকে। লিটনের বাটির খাবার সেই জায়গাটাকে পূরণ করেছে। তিনি তার স্ত্রীর সহযোগিতায় এত কম টাকায় খাবার খাওয়াতে পারছেন। আমরা সবাই মিলে কিংবা কারো সহযোগিতায় যদি তাকে একটু সুন্দর করে ঘর তৈরি করে বসাতে পারি তাহলে আরও ভালো সুযোগ পেতেন পর্যটকরা। তার এত কমদামে খাবার আমাদের ও পর্যটকদের জন্য একটি সেবা বলবো।
এফএ/এএসএম