ভ্যালেন্টিনা-ক্যারোটিনা ফুলকপিতে কৃষকের বাজিমাত

বিধান মজুমদার
বিধান মজুমদার বিধান মজুমদার , জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বর্ণিল রঙের ফুলকপিগুলো দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, নামেও তাদের বাহার। বেগুনিটির নাম ‘ভ্যালেন্টিনা’ আর হলুদটির নাম ‘ক্যারোটিনা’। এ জাতের ফুলকপির বাজারে যেমন চাহিদা দামও দ্বিগুণ। ভালো দাম পাওয়ায় তাই ভ্যালেন্টিনা আর ক্যারোটিনায় মজেছেন শরীয়তপুরের চাষীরা। বছর না ঘুরতেই বাড়ছে আবাদও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে সাদা রঙের ফুলকপির পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়। রঙিন ফুলকপি চাষে সফলতার মুখ দেখায় চলতি অর্থবছরে জাজিরা উপজেলার পাশাপাশি সদর উপজেলা মিলিয়ে দেড় হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ দুই জাতের ফুলকপির আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা।

সাধারণ ফুলকপি রোপণ থেকে বিক্রির উপযুক্ত হতে ৩ মাস সময়ের দরকার পড়ে। অন্যদিকে রঙিন ফুলকপি তার ১০ দিন আগেই বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যায়। তাছাড়া আকারেও বড় হয় রঙিন ফুলকপি। রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় জেলার অন্য চাষিদের মাঝেও দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

ভ্যালেন্টিনা-ক্যারোটিনা ফুলকপিতে কৃষকের বাজিমাত

জাজিরা উপজেলার চর খোড়াতলা এলাকার কৃষক মো. শাহিন আলম। গতবছর ১০ শতাংশ জমিতে সাদা ফুলকপির পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে হলুদ আর বেগুনি দুই জাতের ফুলকপির আবাদ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছিলেন ৪০ হাজার টাকায়। গতবছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তিনি বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপির আবাদ করেছেন। গত বছরের মতো এবারো রঙিন ফুলকপি চাষ করে লাভবান এই কৃষক।

তিনি বলেন, গত বছর আমরা প্রথম রঙিন ফুলকপির চাষ করেছিলাম। উৎপাদন খরচ মিটিয়েও অনেক বেশি দাম পেয়েছিলাম। তাছাড়া বাজারে এ ফুলকপিগুলোর প্রচুর চাহিদা। কেজি প্রতি ৮০ টাকার উপর বিক্রি হয়। আমাদের দেখাদেখি এ বছর এলাকার অনেকেই রঙিন ফুলকপির চাষ করেছেন।

প্রথমবারের মতো এ বছর রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের গয়ঘর এলাকার কৃষক দেলোয়ার খাঁ। তিনি বলেন, গতবছর আমি জাজিরায় বেড়াতে গিয়ে এই ফুলকপি দেখেছিলাম। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আগামীবছর রঙিন ফুলকপি চাষ করবো। এ বছর তাই ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে ১০ শতাংশ জমিতে লাগিয়েছি। খুব ভালো ফলন এসেছে। সাদা আর রঙিন ফুলকপি চাষে খরচ একই, তবে বাজারে নিলে রঙিনটার দাম দ্বিগুণ। আমি অনেক লাভবান আছি। আগামীতে ৪০ শতাংশ জমিতে এ ফুলকপি চাষ করার ইচ্ছা আছে।

ভ্যালেন্টিনা-ক্যারোটিনা ফুলকপিতে কৃষকের বাজিমাত

কৃষক দেলোয়ার খাঁয়ের পাশাপাশি জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন একই এলাকার কৃষক বাবুল খলিফা। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমি সাদা ফুলকপির চাষ করি। এবছর কিছু রঙিন ফুলকপি চাষ করেছি। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিগুলো আকারেও বড় হয়েছে, দামেও অনেক বেশি পাচ্ছি। ব্যবসায়ীরা আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ভ্যালেন্টিনা ও ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপি খেতে বেশ সুস্বাদু। তাছাড়া বাজারে চাহিদাও বেশি, দামও বেশি। সাদা ফুলকপির চাইতে ফলন ভালো হওয়ায় আমাদের চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে এ ফুলকপির চাষাবাদ আরও বাড়বে। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের রঙিন ফুলকপি চাষে সহযোগিতা করা হবে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।