বিএমডিএর উদাসীনতায় ২৫০ বিঘা জমির বোরো চাষ ব্যাহত
চলতি মৌসুমে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গাফিলতি আর উদাসিনতায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় ২৫০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে নলকূপের সেচপাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিকল সেচযন্ত্র মেরামতে অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ ও নদীতে স্থাপিত এলএলপি নলকূপের অপারেটর ও ম্যানেজারদের অভিযোগ, বিএমডিএ গাইবান্ধা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আর্থিক লেনদেন ছাড়া কোনো সেচ সেবা দিচ্ছেন না। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সবদিকে ধান লাগানো প্রায় শেষ হলেও সেচ সংযোগের অভাবে রামনগর মৌজায় বিএমডিএর দুটি নলকূপের আওতায় কোনো জমিতে এখনো বোরো রোপন শুরু করতে পারেননি কৃষকরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ২৫০ বিঘা জমির বোরো ধানচাষ। গত আমন মৌসুমেও সেচ সংযোগের অভাবে ২৫০ বিঘা জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এই এলাকার কৃষকের।
সাঘাটা উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক আনছার আলী বলেন, আমি নিজেই বরেন্দ্র এলএলপি অপারেটর। গত তিন মাস ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ট্রান্সফরমার তোলার জন্য বরেন্দ্র অফিসে যোগাযোগ করছি। কিন্তু বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম কোনো কর্ণপাত করেননি। ফলে এই বরেন্দ্র সেচ পাম্পটি বন্ধ থাকায় আমার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও আমার আশপাশে দুটি সেচ পাম্পের আওতায় দুই শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রামনগর গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, সেচ সংযোগ না থাকায় আমি আমন মৌসুমে জমিতে পানি দিতে পারিনি। ফলে আমার ১০ বিঘা জমির আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায় এবং আমি বারবার যোগাযোগ করলেও বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আমার ক্ষেতে পানির ব্যবস্থা করেনি।
রামনগর বরেন্দ্র সেচ পাম্প ম্যানেজার সাহাদত হোসেন বলেন, আমার ১০ বিঘা জমির জন্য বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করি। শুধু পানি দিতে না পারায় আমার এই বীজতলা শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। আমার সেচ সংযোগটি না দেওয়ার ফলে আমার স্কিমের প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে গত আমন মৌসুমে ১৫ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এবারও পানি সেচের অভাবে ২৫০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু সমস্যা আছে, সমস্যাগুলোর সমাধান করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে।
গাইবান্ধা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম আর্থিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার সঙ্গে সেচের আওতাভুক্ত কৃষকের কোনো কাজ নেই। সাঘাটা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান ওই এলাকার দায়িত্বে আছেন। মূলত চুরি হওয়ার কারণে মৌসুম শেষে ট্রান্সমিটার খুলে রাখা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেচপাম্প সচল করা হবে।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি কমকর্তা কৃষিবিদ মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর দ্রুত পরিদর্শন করে সেচযন্ত্র চালুর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেচকার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।
এফএ/জেআইএম