ভোটের রাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নোয়াখালীতে ১০ জনের ফাঁসি
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. মর্তুজা আলী পাটোয়ারী জানান, ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মামলার ১০ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বাকি ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন।
মৃতুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ওই এলাকার মৃত খুরশিদ আলমের ছেলে সাবেক ইউপি মেম্বার মো. রুহুল আমিন (৪০), মৃত আব্দুল হাশেমের ছেলে মো. হাসান আলী বুলু (৪৪), মৃত ইসমাঈলের ছেলে মো. সোহেল (৩৫), মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে স্বপন (৩৫), আবুল কাশেমের ছেলে ইব্রাহিম খলিল বেচু (২৫), মৃত ছিড়ু মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন আবু (৪০), ফকির আহম্মদের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (৩৫), মো. মোতাহের হোসেনের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. রফিকের ছেলে মো. মুরাদ (২৮) ও মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে মো. জামাল প্রকাশ হেঞ্জু মাঝি (২৮)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, ইসমাইল প্রকাশ বাগন আলীর ছেলে মো. হানিফ (৩০), আবদুল হামিদের ছেলে মো. চৌধুরী (২৫), মৃত আহম্মদ উল্যাহর ছেলে মো. বাদশা আলম বাসু প্রকাশ কুড়াইল্যা বাসু (৪০), তোফায়েল আহম্মদ তোফার ছেলে মোশারফ (৩৫), আবুল কালামের ছেলে মো. সোহেল (২৮) ও পলাতক আসামি মৃত আরব আলী গর্দানের ছেলে মো. মিন্টু প্রকাশ হেলাল (৫৫)।
এর আগে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেফতার ১৫ জনকে জেলা জজ আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট। আদালত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আদেশ দিয়েছেন। আশাকরি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রেখে ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার পেতে সহযোগিতা করবেন।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. হারুনুর রশিদ হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। বাদীর পরিবারের সাক্ষীদের কথামতো বিচারক রায় দিয়েছেন। সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে সূবর্ণচরের চরবাগ্গা গ্রামে স্থানীয় রুহুল আমিন মেম্বারের নেতৃত্বে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে গৃহবধূকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ উঠে, পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় রাতের অন্ধকারে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটায়।
পরদিন ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্যাতিতার স্বামী (৫০) বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় ৯ জনের নামে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা করেন। পরে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন ১৬ জনের নামে চার্জশিট জমা দেন।
পরে ১৬ আসামির মধ্যে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি সদস্য রুহুল আমিনসহ ১৫ জন কারাগারে রয়েছেন। চার্জশিটের ১৫ নম্বর আসামি মো. মিন্টু প্রকাশ হেলাল (৫৫) মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলাটি ৭৩ কার্যদিবস শুনানি হয়। এতে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম বিচারক ছিলেন জেলা জজ সামছুদ্দিন খালেদ। তিনি ৫৮ কার্যদিবস মামলাটি শুনানি করেন। পরে বর্তমান জেলা জজ ফাতেমা ফেরদৌস ১৫ কার্যদিবস শুনানি করেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) অ্যাডভোকেট ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে। আসামিপক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। কোনো সাক্ষীই ভোটকেন্দ্রে পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেনি।
মামলার বাদী সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রায়ে আমি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি। আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমি নিরাপত্তা চাই।
ভুক্তোভোগী ওই নারী রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের প্রতি আস্থা রেখেছিলাম। ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/আরএইচ/জেআইএম