সাতক্ষীরা

ডিম-মুরগির দামে আবারো চাঙা হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প

আহসানুর রহমান রাজিব
আহসানুর রহমান রাজিব আহসানুর রহমান রাজিব , সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মুরগি ও ডিমের দাম ভালো পাওয়ায় সাতক্ষীরার পোল্ট্রি খামারগুলো আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন পোল্ট্রি খামার। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় বর্তমানে উৎপাদনমুখি খামার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার।

খামারিরা জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত মুরগি ও ডিম। এ থেকে কমপক্ষে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে এসব খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চাঁদপুর এলাকায় অবস্থিত ডিম উৎপাদনকারী (লেয়ার) খামার মেসার্স লক্ষ্মী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী অরবিন্দ কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে মুরগির খামার করছি। মাঝে কয়েক বছর লোকসান যাওয়ার পর গত দুই থেকে আড়াই বছর খামারে লাভ দেখা যাচ্ছে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ডিমের দাম বেশ ভালো যাচ্ছে। বর্তমান প্রতিটি ডিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত। মুরগি, খাদ্য, মেডিসিন ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা উঠিয়ে বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে। বাজারে ডিম ও মুরগির এমন দাম থাকলে জেলার পোল্ট্রি শিল্প আরও সম্ভবনাময় হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

একই উপজেলার দহকুলা গ্রামের জিএম পোল্ট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৫ বছর যাবত পোল্ট্রি খামার করছেন। বর্তমানে তার খামারে ৬ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর পর তিনি ৬ থেকে ৭ হাজার করে মুরগি বিক্রি করেন।

তিনি জানান, বাজারে পোল্ট্রি মুরগির যে দাম তা খামারিরা পান না। বাজারে পোল্ট্রি মুরগি বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজি। আর এখানে খামারিরা পান ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি।

একই এলাকার খামারি নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিছু মধ্যসত্ত্বভোগীরা ভালো লাভবান হচ্ছে। জেলার বাইরের পাইকাররা আমাদের খামার থেকে মুরগি কিনে নিয়ে যায়। বাইরের এসব ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করে সাতক্ষীরায়। ফলে বাজারে মুরগির দাম বাড়লেও তার সুফল পাচ্ছেন না প্রান্তিক খামারিরা। অন্যদিকে পোল্ট্রি ফিডের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে।

সাতক্ষীরা বড় বাজারের পাইকারি ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সব ধরনের মুরগির দাম বেশি। গত বছর এই সময় যে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ২১০ টাকার সোনালী ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে শুধুমাত্র সুলতানপুর বড় বাজারে ১৫ থেকে ২০ হাজার কেজি মুরগি বিক্রি হয়। এছাড়া জেলার বাইরের ক্রেতারাও এখান থেকে পাইকারি দরে মুরগি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা পোল্ট্রি খামার মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার খামার বড় আকারে মুরগি পালন করে। তাছাড়া এই শিল্পে অন্তত ৪ লাখ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে। বার্ডফ্লু ও করোনাকালীন সময় জেলার অনেক খামার বন্ধ হয়ে যায়। তবে নতুন করে বাজার চাঙ্গা হওয়ায় আবারও এই খাতে পরিবর্তন আসছে।

তিনি বলেন, পোল্ট্রি খামারগুলো টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে ওষুধ ভ্যাকসিন সরবরাহসহ ফিডের মূল্য নির্ধারণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ওষুধ, ভ্যাকসিন ও ফিডের দাম কমলে খামারিরা আরও লাভবান হবেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় উৎপাদনমুখী পোল্ট্রি খামার রয়েছে ৩ হাজার ৭৯৫টি। এরমধ্যে ব্রয়লার ১ হাজার ৪২৮টি, সোনালী ১ হাজার ৩৯৯টি এবং লেয়ার ৯৬৮টি। তার মধ্যে রেজিস্ট্রেশনকৃত খামারের সংখ্যা ৭২৬টি। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন খামার পরিচালিত হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. এস.এম মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ৪ হাজারের মতো পোল্ট্রি খামারে প্রচুর পরিমাণ মুরগী ও ডিম উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব মুরগি ও ডিম সরবরাহ হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়াতে জেলার খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া মুরগির ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধও সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।