খুলনায় একই কলেজের দুই ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

একদিনের ব্যবধানে খুলনার এশিয়ান নার্সিং কলেজের দুই ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সুজাতা মণ্ডল ও শনিবার সীমা খাতুন নামের দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আত্মহত্যার আগে তারা দুজনই সুইসাইড নোট লিখে গেছেন। তাতে তাদের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি। দুজনই নগরীর শেখপাড়া এলাকার পৃথক দুটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

একই প্রতিষ্ঠানের দুই ছাত্রীর মৃত্যুতে অন্য সহপাঠীরা মুষড়ে পড়েছেন। দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সুজাতা মণ্ডল পাইকগাছা উপজেলার আমিরপুর গ্রামের শ্যামল কান্তি মণ্ডলের মেয়ে। সীমা খাতুন তেরখাদা উপজেলার বাসিন্দা।

সুজাতা এশিয়ান নার্সিং কলেজে বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। সীমা খাতুন ছিলেন ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানান, সুজাতা মণ্ডল কলেজের পাশে শেখপাড়া প্রধান সড়কের হাসিবুর রহমানের বাড়ির চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকতেন। শুক্রবার তার ঘর থেকে মোবাইলফোনে কলের শব্দ আসছিল। কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না দেখে পাশের ঘরের বাসিন্দা কক্ষের ছিদ্র দিয়ে সিলিংয়ে মরদেহ ঝুলতে দেখে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। তিনি সোনাডাঙ্গা থানায় জানালে দুপুরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে।

বৃহস্পতিবার সুজাতা কলেজে যাননি বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। প্রতিবেশীরা জানান, বুধবারের (৩১ জানুয়ারি) পর থেকে তাকে ঘরের বাইরে দেখা যায়নি। তিনি একাই ওই ঘরে ভাড়া থাকতেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুজাতা ছিলেন সবার বড়।

মরদেহ উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা সোনাডাঙ্গা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশিকা রেজা বলেন, ঘরের সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলতে থাকা মরদেহটি ফুলে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বুধবার বিকালে অথবা রাতেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। দীর্ঘসময় মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকায় শরীরে বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শেখপাড়া হাজি ইসমাঈল ক্রস রোডের আমির মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সীমা খাতুনসহ আরও চার ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সবাই বাড়ি চলে যাওয়ায় সীমা একাই বাড়িতে ছিলেন। প্রতিবেশীদের সংবাদের ভিত্তিতে রাত ১টায় পুলিশ ঘরে ফ্যান ঝোলানোর হুকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে।

ঘটনাস্থলে থাকা সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই বলেন, মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। শুনেছি তিন মাস আগে তার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। স্বামীর নাম আজিম।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম বলেন, দুজনই সুইসাইড নোট লিখে মারা গেছেন। সেই নোটে তাদের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি।

তবে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হওয়ায় দুজনের মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না তা তদন্ত করছে পুলিশ। এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, নিহতের পরিবার যদি কোনো মামলা করতে চায়, আমরা মামলা নেবো।

সার্বিক বিষয়ে এশিয়ান নার্সিং কলেজের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিমা নূর লুবনা বলেন, ‘দুই ছাত্রীর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তারা আমাদের ছাত্রী হলেও আমাদের হোস্টেলে কেউ অবস্থান করতো না। আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে তারা লেখাপড়া করতো।’

তিনি আরও বলেন, তাদের মৃত্যুর পর ছাত্রছাত্রীরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। যে বিষয়গুলো পুলিশি তদন্ত হলে বের হয়ে যাবে যে এর সঙ্গে কারো কোনো যোগসূত্র আছে কি না।

আলমগীর হান্নান/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।