৩৫ বছর ইমামতি শেষে ইমামের রাজকীয় বিদায়, লাখ টাকা উপহার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৯:৫০ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

রং-বেরঙের বেলুন দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফুলের তোরা। তৈরি হয়ে এসেছেন মুসল্লিরাও। আর বিশেষ এ আয়োজনটি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী এলাকার কাপাশপাড়া বাইতুন নুর জামে মসজিদে ইমাম হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখের জন্য। দীর্ঘ ৩৫ বছর ইমামতি শেষে জমকালো আয়োজনে তাকে বিদায় দিয়েছেন মুসল্লিরা।

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজ শেষে মুসল্লি ও এলাকাবাসী মিলে প্রথমে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর নগদ এক লাখ টাকাসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দিয়ে সুসজ্জিত একটি ঘোড়ার গাড়িতে উঠিয়ে তাকে নিজ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।

হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ নড়িয়া ভোজেশ্বর ইউনিয়ন উপসী এলাকার মৃত রমিজউদ্দিন শেখের ছেলে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার বিঝারী এলাকার কাপাশপাড়া বাইতূন নুর জামে মসজিদটি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ যখন মসজিদে ইমামতি করতে আসেন তখন ছোট্ট একটি টিনের ছাউনির মসজিদ ছিল সেটি। তখন মাত্র ২২ মণ ধানের বিনিময়ে সেখানে ইমামতি শুরু করেন তিনি। একটানা ৩৫ বছর ইমামতি করে এখন তার বয়স ৭৫ বছর। দীর্ঘদিন ইমামতি শেষে বার্ধক্যের কারণে আজ তিনি অবসর নিলেন। এজন্য বিশেষ সম্মানে তাকে বিদায় জানান মুসল্লিরা।

এমন বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে আসি তখন মসজিদটি জানালা-কপাট ছাড়া ছোট একটি টিনের ঘর ছিল। আমি সামান্য একটি মাদুর বিছিয়ে থাকতাম। উঁইপোকায় বিছানা খেয়ে ফেলতো। তবে আমার একটাই চিন্তা ছিল কীভাবে এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদটিকে সুন্দর করা যায়। ধীরে ধীরে সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে মসজিদটি দোতলা হয়েছে। এখন আমার বয়স হয়ে যাওয়ায় আজ এ মসজিদ ছেড়ে বিদায় নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমার মন চাইছে না বিদায় নিতে। এলাকার সবাই আমাকে অনেক সম্মান দেখিয়েছেন। আল্লাহ তাদের সবাইকে ভালো রাখুক।’

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান চৌকিদার বলেন, ‘হুজুর যখন আমাদের এখানে আসেন তখন মসজিদটি জরাজীর্ণ ছিল। তাকে আমরা বেতন দিতে পারিনি, শুধু এলাকা থেকে ধান উঠিয়ে দিতাম। তারপরও তার কোনো অভিযোগ ছিল না। আমাদের এলাকার সন্তানদের তিনি ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি অনেক কষ্ট করে সেই মসজিদটিকে পাকা দোতলায় পরিণত করেছেন। আজ হুজুর চলে যাওয়ায় আমরা সবাই কষ্ট পাচ্ছি। বাড়ির মহিলারাও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হুজুরকে এক নজর দেখার জন্য।’

এ বিষয়ে মসজিদটির সভাপতি রাশেদুজ্জামান চপল খান বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য বেদনার। কেননা আমরা আমাদের আত্মার আত্মীয়কে বিদায় দিচ্ছি। যিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর আমাদের দ্বীনি শিক্ষায় আলোকিত করেছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।