মধু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় খামারি সাদা মিয়া

শামীম সরকার শাহীন
শামীম সরকার শাহীন শামীম সরকার শাহীন গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষা ক্ষেত। হলুদে রাঙানো নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফুলে ফুলে উড়ছে মৌমাছি। বিশেষ বক্স থেকে আহরণ করা হচ্ছে মধু। কিন্তু সেই মধু বিক্রির উপযুক্ত বাজার পাচ্ছেন না খামারি। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। সরিষা ফুল থেকে এ পর্যন্ত উৎপাদন করা ২৮ মণ মধু বিক্রি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার একমাত্র মৌখামারি সাদা মিয়া।

সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের টিয়াগাছা গ্রামের বাসিন্দা সাদা মিয়া ২০১৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মৌচাষ। ১০ বছর ধরে মৌচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। মধু সংগ্রহের জন্য মৌবক্স নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

মাত্র ২০ বক্স মৌমাছি দিয়ে খামার শুরু করেন সাদা মিয়া। প্রায় দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামেন তিনি। বর্তমানে খামারে মৌবক্স বেড়ে হয়েছে ১৬০ পিস। প্রতি বক্সে মৌমাছি আছে ১৮-২০ হাজার। প্রতিবছর মৌমাছি বিক্রি করেন দুই লাখেরও বেশি (পিস)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার ১০০ বক্সে প্রায় ২০ লাখ মৌমাছি নিয়ে সরিষা ফুলের মধু আহরণ শুরু করেছেন সাদা মিয়া। এজন্য সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম, টিয়াগাছা, ভগবানপুর, পাকুরিয়া ও সদর উপজেলার ঘাগোয়া গ্রামে ঘুরেছেন তিনি। এ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ২৮ মণ মধু। কিন্তু এ মধুর বেশিরভাগই অবিক্রিত রয়ে গেছে। এবারও উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৌ-খামারি সাদা মিয়া।

cdn.jagonews24

সাদা মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিকেজি মধু উৎপাদনে খরচ ২৬০-২৭০ টাকা। পাইকারিতে এসব মধু সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বিভিন্ন কোম্পানিও মধু কেনে। কিন্তু তারা উপযুক্ত মূল্য দেয় না। কোম্পানিতে মধু বিক্রি করলে একধরনের জিম্মি থাকতে হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি করলে লোকসান হয়। অথচ তারা খোলাবাজার থেকে মধু কিনে নিজেদের লেবেল লাগিয়ে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেন।

খামারি সাদা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণ মানুষের মধু কিনে খাওয়ার প্রবণতা কম। যাদের প্রয়োজন হয় শুধু তারাই কেনেন সামান্য পরিমাণে। তাই মধু বিক্রির জন্য বেছে নিতে হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষি মেলা, বাণিজ্য মেলা অথবা অন্যান্য মেলা। কিন্তু এবার নির্বাচনের কারণে এখনো কোথাও মেলা বসেনি। আবার সাধারণ বাজারে খুচরা গ্রাহক কম। মধু নিয়ে গেলেও বিক্রি হয় কম।

তিনি বলেন, বর্তমানে অনলাইনে কিছুটা মধু বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতা সংখ্যা খুব বেশি নেই। কৃষি বিভাগ সহায়তার আশ্বাষ দেয়। কিন্তু সেভাবে সহযোগিতা করে না। মধু বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

মৌমাছির প্রধান খাবার চিনি। বছরে সাত মাস চিনি কিনতে হয়। বর্তমানে চিনির বাজার চড়া। প্রতিকেজি চিনি এখন ১৫০ টাকা। বাড়তি দামে চিনি কিনে মৌমাছি পালনে ব্যয় বাড়ছে। এজন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান এই মৌ-খামারি।

সাদুল্লাপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া বলেন, ফুলে মৌমাছির পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলন বাড়ে। ওই এলাকায় ক্ষতিকর পোকা আসবে না। পরিবেশের ভারসাম্য সুন্দর থাকবে। এতে অন্যান্য ফসলও ভালো হয়। তাই শষ্য উৎপাদনে বেশি বেশি মৌ-খামার থাকা প্রয়োজন। তাদের সহায়তার জন্য সরকারি উদ্যোগ জরুরি। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, এখানকার একমাত্র মৌ-খামারি সাদা মিয়ার জন্য মধু রিফাইন মেশিনের আবেদন করা হয়েছে। এটি বরাদ্দ এলে বাড়তি মধু উৎপাদন হবে।

তিনি আরও বলেন, উপযুক্ত মূল্যে মধু বাজারজাত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে মধুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা মৌ-খামারটি টিকিয়ে রাখতে যতটুকু সম্ভব কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সহযোগিতা করবো।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।