যশোরে জাতীয় পিঠা উৎসব
লোকগানের সুরে পিঠা খাওয়ার ধুম
পৌষের শীতের নরম বিকেল। যশোর শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গনে দুইধারে সারি সারি স্টল। এসব স্টলের টেবিলে থরে-বিথরে সাজানো বাহারি সব পিঠা। জামাইপুলি, ঝালজামাই, পাটিসাপটা, মালপোয়া, পুলি, নকশি, দুধচিতই, ক্ষীরকুলি, তিলপনির, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, সুন্দরী পাকানসহ শত রকমের পিঠা দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব স্টলগুলোতে। একটু দূরেই শিল্পকলার উন্মুক্ত মঞ্চ। সেখানে চলছে লোকগানের আসর।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) এমনই আবহে শিল্পকলায় উদ্বোধন হলো জাতীয় পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসবের। বাঙালির রসনা বিলাসের অন্যতম উপকরণ পিঠার স্বাদ নিতে প্রথমদিনই উৎসবে যোগ দেন শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। দলবেঁধে এ উৎসবে মানুষেরা আসছেন, স্টল থেকে বাহারি সব পিঠার স্বাদ নিয়ে লোকগানের মনোরম পরিবেশনা উপভোগ করেন।
দেশীয় পিঠার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে তিনদিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে যশোর শিল্পকলা একাডেমি। উৎসবের প্রথম দিন রোববার বিকেলে উদ্বোধন করেন যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা বাঙালি ও বাংলা ইতিহাস ঐতিহ্যেকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। তারই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আজকের এই পিঠা উৎসব। দীর্ঘ আবহমানকাল ধরে বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যর মধ্যে পিঠা রয়েছে। কিন্তু কালের পরিক্রমায়, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে পরেই আমাদের এই ঐতিহ্যেগুলোতে হারাতে বসেছি। কিন্তু আমরা চাই না, এই ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে না যাক। বৈচিত্র্য মধ্যে মানবজীবনের সম্পূর্ণতা। সবাই একরকম হলে তো আর বৈচিত্র্য থাকলো না। বৈচিত্র্যতার মধ্যেই সার্থকতা। এটা ভালো দিক, সারাদেশে পিঠা উৎসব হচ্ছে। এ উৎসবকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ আমাদেরকেই দিতে হবে। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুলের সভাপতিত্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচার অফিসার হায়দার আলী, শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অনুপম দাস, চঞ্চল সরকার, সদস্য আতিকুজ্জামান রনি, শহিদুল ইসলাম বাদল। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্যরা মেলার স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল জাগো নিউজকে জানান, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বিগত কয়েক বছর ধরে পিঠা উৎসব করে আসছে। পিঠা দিয়ে আগত অতিথিদের আপ্যায়িত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিনদিনের পিঠা মেলা ও লোক সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, বাঙালীর ঐতিহ্যে পিঠার সংস্কৃতি শহর জীবনে তুলে আনা, নতুন প্রজন্মকে গ্রামীণ পিঠার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মূলত এই আয়োজন। প্রতিদিন লোকজ সংগীত পরিবেশন হবে। মেলাতে যশোর শহরের ১৩ পিঠা উদ্যোক্তা স্টল দিয়েছেন। মেলায় যশোরের যে যশ খেজুর রস ও গুড়ও থাকছে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। তিন দিনের এই উৎসব শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি।
এদিকে উৎসবে বাড়তি আমেজ সৃষ্টি করেছে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। কচি কাঁচাদের এই প্রতিযোগিতায় শিশুরা তাদের রঙ তুলিতে গ্রামবাংলার দৃশ্য, পিঠা পুলি বানানো, গাছি খেজুর গাছ কাটা, রস আহরণসহ বিভিন্ন দৃশ্য চিত্রপটে তুলে আনে।
মিলন রহমান/এনআইবি/জেআইএম