প্রধান শিক্ষক-কমিটির দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীশূন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়

ইকবাল হোসেন মজনু ইকবাল হোসেন মজনু , নোয়াখালী নোয়াখালী
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিক্ষার্থী সংকটে ক্লাস নেওয়া হয় না নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের নন্দীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন চারজন। কিন্তু ছাত্রছাত্রী নেই বললেই চলে। ফলে পরিপাটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের সময় সব আসন ফাঁকাই থাকে। আর ক্লাস না নিয়ে প্রতিনিয়ত অলস সময় কাটান শিক্ষকরা। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তারসহ তিন শিক্ষক অফিসে বসে আছেন। একজন প্রাক্-প্রাথমিকের পাঠ পরিকল্পনা প্রস্তুত করছেন। আর সহকারী শিক্ষক জহিরুল আলম সকালে এসে স্বাক্ষর দিয়ে চলে গেছেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব শ্রেণি মিলিয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে মাত্র চারজন। পরে ক্লাস না নিয়েই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

jagonews24

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির এ দৃশ্য নতুন নয়। বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শিক্ষার্থী হারাতে থাকে এই স্কুল। কমতে কমতে এখন মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭-তে এসে ঠেকেছে। এরমধ্যে সব ক্লাস মিলিয়ে প্রতিদিন উপস্থিতি তিন-চার জনের বেশি হয় না। এতে ক্লাস নেওয়ার পরিবেশ না থাকায় চার শিক্ষক ঘুরেফিরে সময় কাটান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এক বছর আগে ছেলেকে এ স্কুলে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে রিডিং পড়তে পারে না। এখানে লেখাপড়ার মান খারাপ। এজন্য কেউ সন্তানদের এখানে ভর্তি করাতে চান না। সবাই আশপাশের অন্যান্য স্কুল ও মাদরাসায় সন্তানদের পড়াচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতির জন্য অশোভন আচরণ ও অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের কথা বলছেন স্থানীয়রা।

jagonews24

তবে প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ, স্কুল পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের নিষেধের কারণে লোকজন তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়টিতে ভর্তি করান না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ২০০৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান সহকারী শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত ক্লাস নিতেন না। চার-পাঁচ বছর ধরে একেবারেই ক্লাস নেন না। তার দায়িত্ব অবহেলার কারণে অন্য শিক্ষকেরাও নিয়মিত আসেন না। এ কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এ স্কুলে দিচ্ছেন না।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার বলেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতি কোনো মিটিংয়ে আসেন না। বিভিন্ন তহবিল থেকে আপ্যায়ন বিলসহ নানা অজুহাতে কমিশন চান। না দেওয়ায় তিনি কমিটির অন্য সদস্যদের এবং স্থানীয় মানুষজনকে ছেলেমেয়ে স্কুলে দিতে নিষেধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির সভাপতির কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন না অভিভাবকরা।

কমিটির সভাপতি মানিক মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বরং প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে কাজ না করে বিভিন্ন ভুয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করার জন্য আমাকে চাপ দেন। স্বাক্ষর না করায় এবং তার কথামতো ভুয়া ভাউচারে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে না দেওয়ায় তিনি আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন।’

jagonews24

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার জেরে কমিটির লোকজনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলটি শিক্ষার্থীশূন্য। স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ করা না হলে সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন না।’

সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ জানান, ২০২২ সালে ম্যানেজিং কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দ্বন্দ্বের জেরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক মাস আগে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, শিক্ষার্থী-সংকটসহ অনেক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন ব্যক্তির জন্য একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা যাবে না।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।