চট-কাঁথা গায়েও শীতে কাঁপছে গবাদিপশু

শামীম সরকার শাহীন
শামীম সরকার শাহীন শামীম সরকার শাহীন গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৪:২১ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪

তীব্র শীত থেকে রক্ষায় গৃহপালিত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার শরীরে মোটা কম্বল, চট কিংবা কাঁথা জড়িয়ে দিচ্ছেন দেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধার কৃষক ও খামারিরা। তারপরও শীত নিবারণ হচ্ছে না। ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে গবাদিপশুগুলো।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় গাইবান্ধায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা করা হয় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি শীত মৌসুমে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

স্থানীয়রা বলছেন, শেষ বিকেলের দিকে শুরু হয় ঠান্ডা বাতাস। চরের সব জায়গায় দুপুর থেকেই ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে। কুয়াশার দাপট এতটাই যে কিছুটা দূরের জিনিসপত্রও দৃশ্যমান হয় না। ফলে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়েছে ছিন্নমূল, অসহায় ও খেটেখাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষ।

চট-কাঁথা গায়েও শীতে কাঁপছে গবাদিপশু

শীতের চলমান দাপটে জবুথবু অবস্থায় কৃষক এবং খামারিদের বাড়িতে রাখা গরু-ছাগলের কষ্টও বহুগুণে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাতে ও সকালে শীতের কারণে গরু-ছাগলগুলো কাঁপতে থাকে। স্বাভাবিক খাবারও খেতে চায় না। গবাদিপশুগুলোকে পুরানো কাঁথা, কম্বল, বস্তা, পুরোনো জামা এবং যার যা আছে তাই দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত চরাঞ্চলের গবাদিপশুগুলো।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খামারি হামিদুর রহমান বলেন, ‘আমার খামারে উন্নত জাতের চারটি ষাড় গরু রয়েছে। এসব গরুগুলোকে শীত থেকে রক্ষায় গোয়াল ঘরের মেঝেতে ম্যাটস, শরীরে পাটের বস্তার চাদর দিয়ে রেখেছি। এছাড়া রাতে যাতে বাতাস না ঢোকে সেজন্য গোয়ালঘরের বেড়া পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখার পাশাপাশি মোটা কাপড়ের মশারি টানিয়ে রাখছি। তারপরও গরুগুলোর জবুথবু অবস্থা।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কৃষক হারুন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘তীব্র শীতে মানুষের মতোই গবাদি পশুদেরকেও চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। শীত ও ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে তাদের শরীরে মোটা কাঁথা-কম্বল কিংবা চট জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

চট-কাঁথা গায়েও শীতে কাঁপছে গবাদিপশু

কিসামত সদর গ্রামের হাফিজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই শীতে মানুষের যেমন কষ্ট হয় তারচেয়ে বেশি কষ্ট গরু-বাছুরের। আমরাতো ঠান্ডা লাগলে বলতে পারি কিন্তু ওরাতো বলতে পারে না। তাই বস্তার চট তাদের গায়ে দিয়েছি।’

ফুলছড়ি উপজেলার জিগাবাড়ি চরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘প্রচন্ড শীত এবং ঠান্ডা বাতাসে গরু-ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।শীতের হাত থেকে বাঁচাতে গরুর গায়ে চট দিয়েছি।’

চট-কাঁথা গায়েও শীতে কাঁপছে গবাদিপশু

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে শীতের প্রচন্ড দাপট চলছে। শীত থেকে রক্ষায় গবাদিপশুকে ঢেকে রেখে উষ্ণ রাখার বিকল্প নেই। তাই এ সময় গোয়ালঘরে যাতে ঠান্ডা বাতাস না ঢোকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতের সময় গবাদিপশু কম খাবার গ্রহণ করে বলে জানান তিনি।

রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সকাল ৯টায় জেলায় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।