আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
বেড়েছে শীতজনিত রোগী, চিকিৎসক সংকটে ভোগান্তি
ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা জয়পুরহাট। বিশেষ করে আক্কেলপুর উপজেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন ১০-১২ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ৫৮টি পদ শূন্য রয়েছে হাসপাতালটিতে। চিকিৎসক ও জনবল কম থাকায় রোগীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
দ্রুত চিকিৎসা সেবা পেতে রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটছেন রোগী ও স্বজনরা। এতে ব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে রোগী ও স্বজনদের।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চিকিৎসক পদে ২৭ জনের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদে ১১ জন থাকার কথা থাকলেও সেই পদে নেই কোনো চিকিৎসক। সম্প্রতি দুজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে দুদিন চিকিৎসা সেবা দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে সাতজনের বিপরীতে রয়েছেন ছয়জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদের ৫৮ জনের মধ্যে কর্মরত ৪২ জন। আইএইচটি, সিভিল সার্জন অফিস, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন জায়গায় আটজন কর্মরত রয়েছে। শূন্য রয়েছে আটটি পদ। সবমিলিয়ে ১২৮টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩৫টি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নন-ক্লিনিক ও ক্লিনিক এ দুই বিভাগে সেবা দেয় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। এরমধ্যে নন-ক্লিনিক পর্যায়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদ শূন্য থাকায় ওই পদে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। পরিবার কল্যাণ সহকারী পরিদর্শক পদে ৩২ জনের মধ্যে কর্মরত ১৭ জন।
ক্লিনিক পর্যায়ে উপজেলায় একজন মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব থাকলেও তিনি সপ্তাহে একদিন সেবা দেন। অন্যান্য ২৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত ১৬ জন। রায়কালী মা ও শিশু কেন্দ্রে আউটসোর্সিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চারজন।
সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। তিনটি কক্ষে একজন করে চিকিৎসক সকাল থেকে রোগী দেখছেন। শীত বাড়ায় শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। ভর্তি হচ্ছেন প্রতিদিন ১০-১২ জন রোগী। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
আসমা খাতুন নামের একজন বলেন, ‘শীত বাড়ায় ঠান্ডা লেগে আমার দেড় বছরের মেয়ের সর্দি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। হাসপাতালে রোগীদের প্রচণ্ড ভিড় থাকায় দীর্ঘসময় বাচ্চা কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আসিফ আদনান বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগী বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আমাদের চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ডিউটির পরিমাণ বাড়িয়ে আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু শফি মাহমুদ বলেন, শীতে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় জনবলের অভাবে আমাদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এসআর/জেআইএম