‘ইচ্ছে করে নিজেও নদীতে ঝাঁপ দেই’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৭:৫৮ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৪

বাড়ি থেকে ফোন করে একটু পরপরই খবর জানতে চায়। ভাস্তিরা কান্নাকাটি করছে। ওদের সান্ত্বনা দিতে পারি না। চারদিন ধরে ঘাটে আছি। ভাইয়ের কোনো সন্ধান মিললো না। এখান থেকে যাওয়ার মতো অবস্থা আমার নাই। ইচ্ছে করে নিজেও নদীতে ঝাপ দেই। ক্ষোভ ও হতাশা ভরা কণ্ঠে কথা গুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ফেরিডুবিতে নিখোঁজ ইঞ্জিনচালক হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। রফিকুল ইসলাম বলেন, একে একে তিনটি উদ্ধারকারী জাহাজ আসলো। একজন মাত্র মানুষ নিখোঁজ। অথচ তার কোনো সন্ধান দিতে পারছে না। উদ্ধারকাজের কোনো অগ্রগতি নেই। চারদিনে মাত্র তিনটি ট্রাক উদ্ধার করেছে তারা।

তিনি বলেন, এখন হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো গতি দেখছি না। জীবিত মানুষটা না পাই অন্তত লাশটা তো পাইতে পারি। এতোটুকু আশা ও দাবি আমরা করতেই পারি।

‘ইচ্ছে করে নিজেও নদীতে ঝাপ দেই’

নিখোঁজ হুমায়ুন কবীর ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিনচালকের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিসির ওয়ার্কাস ইউনিয়নের আরিচা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি ছিলেন। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সুমন খান জানান, তাদের সভাপতিকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন তারা। পরিবার থেকে তার খোঁজ জানতে চাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। অন্তত দ্রুত মরদেহটি উদ্ধার করে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।

সুমন খান আরও জানান, যখন রজনীগন্ধা ফেরিটি ডুবে যাচ্ছিল তখন চালক হুমায়ুন কবীরই আত্মরক্ষার জন্য সবাইকে ডাকাডাকি করে সজাগ করেন। তার কারণেই প্রাণ বেঁচেছেন সবাই। নয়তো হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তো। অথচ যে সবাইকে সজাগ করলো সেই মানুষটিই আটকা পড়েছে ফেরিতে।

নিখোঁজ হুমায়ুন কবীরের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মাটিভাঙ্গা গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল লতিফ পাহলান। হুমায়ুন কবীরের দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। ২০১১ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।

‘ইচ্ছে করে নিজেও নদীতে ঝাপ দেই’

গত বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে ৯ ট্রাক নিয়ে ডুবে যায় ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা। এসময় ২০ জন জীবিত উদ্ধার হলেও নিখোঁজ রয়েছেন ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিনচালক হুমায়ুন কবীর। দুর্ঘটনার পর প্রথমে উদ্ধার কাজে অংশ নেয় উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা। এরপর যোগ দেন রস্তম। তিনদিনে তারা মাত্র তিনটি ট্রাক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

শুক্রবার দুপুরে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে আসে। প্রত্যয়ের মাধ্যমে ফেরিটিকে টেনে তোলার কাজ শুরু হয়। তবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র নিমজ্জিত ফেরির এক পাশে তার বাঁধতে সক্ষম হয়েছে তারা। আরেক পাশে তার বাঁধার পর ফেরিটি টেনে তোলার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিআিইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুর রহিম।

নৌবাহিনীর ডুবুরিদলের সমন্বয়ক লে. শাহপরাণ ইমন জানান, পদ্মায় ডুবে যাওয়ার পর ফেরিটি উল্টে গেছে। নদীতে প্রচন্ড স্রোত ও শীতের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যবহৃত হচ্ছে। স্রোতের কারণে ফেরির ভেতরে প্রবেশ করতে তাদের অনেক বেগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে ডুবুরি দল। ফেরিটি উদ্ধার করতে সক্ষম হলেই নিখোঁজ হুমায়ুন কবীর ও আটকা পড়া ৬ ট্রাকের সন্ধান মিলতে পারে।

বি.এম খোরশেদ/আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।