যে হোটেলে ৩০০ টাকায় মেলে ‘হেলিকপ্টার’
অডিও শুনুন
আধা ভাঙাচোরা একটি খাবারের হোটেল। নেই কোনো সাইনবোর্ড। এই হোটেলে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয় ‘হেলিকপ্টার’। প্রশ্ন আসতেই পারে, এই দামে আবার কেমন হেলিকপ্টার?
আদতে এটি কোনো উড়ন্ত যান নয়। এটি বিশেষভাবে তৈরি ইলিশ মাছের কাঁটাবিহীন লেজ ভাজা। খেতে কিছুটা ভিন্ন ধরনের হওয়ায় দোকানি এর নাম দিয়েছেন ‘হেলিকপ্টার’।
বিশেষ এ খাবারটি খেতে হলে আপনাকে যেতে হবে শরীয়তপুরের নড়িয়া বাজারের সালাম খানের হোটেলে। অনেকে হোটেলটিকে সুরত খানের হোটেল নামেও ডেকে থাকেন।
দোকানের মালিক সালাম খানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোটেলটি অন্তত ১২৬ বছরের পুরোনো। সালাম খানের বাবা সুরত খান প্রথম হোটেলটি দিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৭০ বছর হোটেলটি পরিচালনা করেন। সুরত খানের মৃত্যুর পর তার ছেলে সালাম খান ৫৬ বছর ধরে হোটেলটি পরিচালনা করে আসছেন। তার হোটেলে বর্তমানে সাতজন কর্মচারী কাজ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে নদীর বিভিন্ন মাছ, দেশি মুরগি আর খাসির মাংস বিক্রি করে ভোজনরসিকদের মন জয় করে আসছে সালাম খানের হোটেলটি। মাটির চুলায় আর শিল-পাটায় রান্না করায় খাবারের মানও থাকে অটুট। ‘হেলিকপ্টার’ নামটি দিয়েছেন সালাম খান নিজে।
সালাম খান জানান, অনেকেই কাঁটার জন্য ইলিশ মাছের লেজ পছন্দ করেন না। তাই লেজটিকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে কোনো কাঁটা না থাকে। প্রথমে ইলিশ মাছের লেজটিকে আড়াআড়িভাবে ঘন করে ফালি দেওয়া হয়। এতে লম্বা কাঁটাগুলো খুব ছোট হয়ে যায়। পরে ডুবন্ত তেলে ভাজলে খাওয়ার সময় এসব কাঁটা আর মুখে বাধে না। তাই খেতেও অসুবিধা হয় না।
ভোজেশ্বর এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন (৫৫)। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নড়িয়ায় এলেই সালাম খানের দোকানে দুপুরের খাবার খাই। তবে ‘হেলিকপ্টার’ খেতে দারুণ লাগে।”
রনি হাওলাদার নামের এক ভোজনরসিক বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সালাম কাকার হোটেলের খাবার খাই। তার হোটেলে তৈরি প্রতিটি খাবার ভীষণ সুস্বাদু, একদম বাড়ির তৈরি খাবারের মতো। তার হোটেলের স্পেশাল জিনিসটি হচ্ছে ‘হেলিকপ্টার’।
তিনি বলেন, ‘অনেকে কাঁটার ভয়ে ইলিশ মাছের লেজ খান না। কিন্তু সালাম কাকার হোটেলে ইলিশ মাছের লেজ বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়। গলায় কাঁটা বেঁধে যাওয়ার ভয় থাকে না। খেতেও দারুণ।’
খাবার খেতে আসা মোহাম্মদ সবুজ বলেন, “প্রথমে আমি যখন খাবার খেতে এই হোটেলে আসি, তখন হেলিকপ্টারের কথা শুনি। একপ্রকার কৌতূহলের বশে খাবারটি চাই। পরে দেখি ইলিশ মাছের লেজ। তবে মুখে দিয়ে দেখি কোনো কাঁটা নেই। খেতেও বেশ ভালো লেগেছিল। এরপর বেশ কয়েকবার আমি এই ‘হেলিকপ্টার’ খেয়েছিলাম।”
হোটেল মালিক সালাম খান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এই হোটেলটি অনেক পুরোনো। বাবার পরে আমি এখন চালাই। আমার এখানে প্রতিটি খাবার মাটির চুলা আর শিল-পাটায় মসলা বেটে রান্না করা হয়। নদীর টাটকা মাছ, দেশি মুরগি আর খাসির মাংস রান্না করা হয়। বিশেষ চাহিদার হেলিকপ্টারতো আছেই। যারা একবার হেলিকপ্টার খেয়েছেন তারা পরেরবার এলে এই খাবার মিস করতে চান না।
বিধান মজুমদার অনি/এসআর/এমএস