মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দোকান এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুল!

আরাফাত রায়হান সাকিব আরাফাত রায়হান সাকিব , মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাড়ায় বরাদ্দ দেওয়া দোকান ব্যবহারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চুক্তি অনুযায়ী সরকারিভাবে বরাদ্দ নেওয়া দোকানগুলো ভাড়া হস্তান্তরযোগ্য না হলেও বর্তমানে বরাদ্দ নেওয়া ব্যক্তিরা তৃতীয় পক্ষের কাছে ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০২১ সালের আগে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হলেও বর্তমানে সেখানে ফুলকড়ি কিন্ডারগার্টেন স্কুল নামের একাটি স্কুল চালুর প্রস্তুতি চলছে। এক্ষেত্রে নেওয়া হয়নি বীর মুক্তিযুদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন রক্ষণাবেক্ষণা ও পরিচালনা কমিটির কোনো অনুমতি। তবে কিন্ডারগার্টেন সংশ্লিষ্টদের দাবি, বরাদ্দ পাওয়া দোকান মালিকদের তত্ত্বাবধানেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে।

উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, দোকানগুলো সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০২১ সালের আগে। নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা ১০ বছর মেয়াদে চুক্তি অনুযায়ী অবৈধ বা অনৈতিক বিষয় ছাড়া বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যেকোনো কার্যক্রম করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে নিতে হবে তত্ত্বাবধানকারী কমিটির অনুমোদন।

মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দোকান এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুল!

সরেজমিনে দেখা যায়, কমপ্লেক্সটিতে মোট ১২টি দোকান রয়েছে। নিচতলার দুইটি দোকান খোলা থাকলেও বাকি ৪টি দোকান বন্ধ। দ্বিতীয়তলায় দোকানগুলোতে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থলে তৈরি করা হচ্ছে ফুলকলি কিন্ডারগার্টেন নামের একটি স্কুল। দোকানগুলোতে সাজানো হয়েছে বেঞ্চ-টেবিল। কমপ্লেক্স ভবনে প্রবেশে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স লেখার ওপর ঝুলছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যানার। তবে এ সময় বিদ্যালয়টিতে কাউকে পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোকান বরাদ্দ নেওয়া ব্যক্তিরা কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। যা নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও তৃতীয়পক্ষের কাছে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি আড়াল করতে কৌশলে করা হয়নি কোনো চুক্তি।

এ বিষয়ে ব্যানারে থাকা নম্বরে কল দিয়ে যোগাযোগ করলে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করে ফুলকড়ি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, এখানে দোকান থেকে কোনো আয় নেই। তাই যারা দোকান মালিক রয়েছেন তাদের তত্ত্বাবধানেই বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে অন্য কাউকে ভাড়া দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে দোকান বরাদ্দ পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আওলাদ উদ্দিন বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার পর দোকানগুলো থেকে আমাদের কোনো আয় হয়নি। সরকারকেতো আমরা ভাড়া দিতাছি, তাহলে স্কুল থেকে কি আমরা টাকা নোবো না? আর এটাতো আমরা ভাড়া দেইনি, আমরা প্রতিটি দোকানদার স্কুলের পরিচালনা কমিটিতে আছি। প্রতিমাসে ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া দিতে হয়। আমরা স্কুল পরিচালনায় আছি। স্কুল থেকে আমাদের যে টাকা দেওয়া হবে তা থেকে আমারা ভাড়া দেবো। স্কুলের বিষয়টি যদি প্রশাসন না জানে, আমরা জানাবো।

মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দোকান এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুল!

তিনি আরও বলেন, এলাকায় আরও কিছু কিন্ডারগার্টেন আছে। আগে ফুলকড়ি কিন্ডারগার্টেনটি লোকজন ও তারা একসঙ্গে কাজ করতেন। এখন এটা আলাদা হওয়ায় নিজেরাই করছেন। এখানে যেন স্কুলটি না করতে পারে সেজন্য এমন অভিযোগ করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. মনসুর আলম বলেন, ২০২১ সালের আগে দোকানগুলো আবেদন ও পরে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ হয়। অবৈধ-অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড ছাড়া যেকোনো ব্যবসা পরিচালন করতে পারেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিতে আবেদন করে অনুমতি নিতে হবে।

তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুল যে করা হচ্ছে সে বিষয়টি আমাদের অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। প্রতিটি দোকান আলাদা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো কিন্ডারগার্টেন ভাড়া দেইনি। অন্যের কাছে ভাড়া ও স্কুল পরিচালনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। যদি বরাদ্দ নেওয়া দোকান পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ম অমান্য করা হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, দোকান বরাদ্দ নেওয়া কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন যে তারা সেখান থেকে আয় করতে পারছেন না। তাই তারা অন্য প্রতিষ্ঠান দিতে চান। অন্য কাউকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।