নিস্তেজ হচ্ছেন জুয়েল, জীবন দিয়ে হলেও ছেলেকে বাঁচাতে চান বাবা
অডিও শুনুন
শ্রবণপ্রতিবন্ধী বাবাকে কেউ কাজে নেয় না, সংসার চালাতে দিনমজুরী করে কোনোমতে চলছিল তিন বেলার আহার। এমন অবস্থায় পরিবারের ছয় সদস্যকে ভালো রাখতে ১৭ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেন জুয়েল। তবে বিধিবাম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দুই বছর বিছানায় পড়ে আছেন জুয়েল (১৯)।
অসুস্থ জুয়েল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের গঙ্গামতি গ্রামের শ্রবণ প্রতিবন্ধী মো. ইউসুফের ছেলে৷ চার ভাই-বোনের জুয়েল দ্বিতীয়। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ হলেও অর্থের অভাবে সংসারের চাকা ঘুরাতে নেমে পড়েন দিনমজুরের কাজে। বেশ কয়েক বছর কাজ করলেও ২০২১ সালে এসে পেটেব্যথা, বমি ও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়া থেকে শুরু হয় জুয়েলের অসুস্থতা। অক্ষর জ্ঞানহীন বাবা-মা একদিকে সংসারের খরচ মেটানো অন্যদিকে ছেলের সুস্থতার জন্য নিজেদের সর্বশেষ সম্বল বাড়ির গাছ, হাঁস-মুরগি ও দশটি ছাগল দেন। এরপরও ছেলের সুস্থতার লক্ষণ মেলে না। এভাবে এক থেকে দেড় বছর পার হয়ে যায় কিন্তু জুয়েল দিন দিন অসুস্থ হয়ে যেন বিছানার সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন।
১৯ বছরের সুঠাম দেহের এক তরুণ এখন বিছানায় পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসা কিংবা পরিবার চালানোর কোনো সক্ষমতাই নেই শ্রবণ প্রতিবন্ধী বাবা ইউসুফের। এমন সময় স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবক জুয়েলকে বাঁচাতে বিভিন্ন দোকান, হাট-বাজার এবং মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন ক্যানসারের মতো বড় ধরনের রোগে ভুগছেন জুয়েল, যে কারণে প্রয়োজন মোটা অংকের টাকা এবং সঠিক পরামর্শ।
শাহাদাত নামের এক প্রতিবেশী বলেন, আমি জুয়েলের বন্ধু। আমরা একসঙ্গে পাড়ায় খেলা করতাম, কাজ করতাম। হঠাৎ করে গত দুই বছর যাবত বাড়ির বাইরে বের হয় না জুয়েল। তবে গত তিন-চার মাস যাবত খুব অসুস্থ। একটা সময় জানতে পারি ওর পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব না। তাই আমরা সবাই মিলে মানুষের কাছে হাত পেতেছি। তবে মানুষ যা ছোটখাটো সাহায্য করছে তাতে ওর এত বড় চিকিৎসা সম্ভব না। তাই ওর জন্য প্রয়োজন অনেক মোটা অংকের টাকা।
জুয়েল রানা নামের স্থানীয় যে তরুণ এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি বলেন, আমরা ওর জন্য হাটবাজারে মানুষের কাছে হাত পেতেছি। তাতে ১৫-২০ হাজার টাকার মতো উঠেছে। এটা নিয়ে আমরা আপাতত ওকে বরিশালে ভর্তি করাবো। এরপর বাকি যে টাকা লাগবে সেটা এখনো অনিশ্চিত।
জুয়েলের বাবা ইউসুফ বলেন, আমি কানে শুনি না। তাই আমাকে অনেকে কাজে নিতে চায় না। ছেলেটি যখন কাজ করতো তখন আমি দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতাম। ও অসুস্থ হওয়ার পর আমি মানুষের কাছে গিয়ে হাত পাতি ওর চিকিৎসার জন্য। যখন যে কাজ পাই তাই করি। কিন্তু আমার পক্ষে এখন মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমার রক্ত বিক্রি করে হলেও আমি তা দিয়ে ওর চিকিৎসা ও আমার পরিবার চালাতাম। কিন্তু সেটাও সম্ভব না। দেশবাসীর কাছে ছেলেটার জন্য সাহায্য চাই।
অসুস্থ জুয়েলের মা লাইলী বেগম বলেন, আমি আমার সন্তানের চিকিৎসার জন্য এলাকার সকলের কাছে সহযোগিতা চাই। আমার স্বামী কানে শোনে না তাই অনেকেই কাজে নিতে চায় না। ছেলেটাও কাজ করতে পারে না। পরিবারের তিন বেলার খাবারের জন্য আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলের কাছে হাত পেতে সংসার চালাই। ছেলের চিকিৎসার জন্য যখন যে যা বলে সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করি। কিন্তু আমার ছেলেটা সুস্থ হচ্ছে না। গত কয়েক মাস যাবত আমার ছেলেটা কিছু খেতে পারে না, মুখে কিছু দিলেই সঙ্গে সঙ্গে বমি করে। সকলের কাছে অনুরোধ আমার ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য।
কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, জুয়েল নামের যে রোগীকে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়েছে তার শারীরিক অবস্থা প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে তার খাদ্যনালীতে বড় ধরনের সমস্যা অথবা ক্যানসারজনিত সমস্যায় সে ভুগতে পারে। তাই বড় ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়া কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তার শরীরের যে বর্তমান অবস্থা তাতে উন্নত মানের চিকিৎসা এবং অনেক বড় অংকের টাকার প্রয়োজন। তাই পরামর্শ থাকবে, যে করেই হোক তার জন্য টাকা সংগ্রহ করে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করানোর।
পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস জাগো নিউজকে বলেন, এসকল অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপজেলা কার্যালয় অথবা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করলে আমরা বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেবো।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এফএ/এমএস