সমর্থকদের ওপর হামলার বর্ণনা দিয়ে কাঁদলেন পরাজিত প্রার্থী
নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের ট্রাক প্রতীকে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের শতাধিক সমর্থকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন শিহাব উদ্দিন শাহীন। এসময় তিনি অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দলীয় সিদ্ধান্তের ঘোষণায় আমি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি এবং আমার পরিবার সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করে আসছি। জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এ দলের ছায়াতলে থাকতে চাই। নির্বাচনে কীভাবে কী হয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন। তবে এখন নৌকার প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী জয়ী হওয়ার পর তার লোকজন আমার শতাধিক সমর্থকের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পাঁচদিন আগ থেকে নৌকার লোকজনের হুমকি-ধমকিতে বুঝেছি তারা আগ্রাসী ভূমিকায় থাকবে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। অসংখ্য ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নৌকার লোকজন জালভোট দিয়েছে। আমি সুবর্ণচর পূর্বচরজব্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭৫ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনসহ অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে সরাসরি জালভোট দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। তবে অভিযোগ করার পরও অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে নিজের সমর্থকদের ওপর হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দিন শাহীন। তিনি বলেন, ‘আমি হেরে গেছি তাতে কোনো দুঃখ নেই। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাতে আমি ও আমার পরিবার খুশি। কিন্তু আমার এলাকায় টানা চতুর্থবারের জয়ী এমপি একরামুলের লোকজনের অন্যায়-অত্যাচার থেকে আমার ট্রাক মার্কার নিরীহ সমর্থকদের বাঁচানোর আকুল আবেদন জানাচ্ছি। কারণ তারাও আওয়ামী লীগ করে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। এসব হামলা বন্ধ না হলে নিজেদের মধ্যে ঘরে ঘরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। আমি সেটা চাই না।’
শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আজ যদি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কেউ হামলা করতো তা মেনে নিতাম, কারণ তাদের আদর্শ ভিন্ন। কিন্তু কাদের জন্য, কীসের জন্য আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার জন্য নেতাকর্মীদের ওপর এমন নির্দয় হামলা চালানো হচ্ছে? আমি এর বিচার চাই এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে দলীয়ভাবে ও প্রশাসনিকভাবে এর বিচার করতে হবে। তা নাহলে এসব নেতাকর্মী হয় দলত্যাগ করবে না হয় নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।’
এসময় নোয়াখালী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুজ জাহের, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান নাছের, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বাবর, সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খুরশিদ আলমসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন (জিবি কর্মকর্তা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সুবর্ণচর) জালভোটের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, তার কেন্দ্রে কোনো ধরনের জালভোট বা অনিয়মের সুযোগ ছিল না।
হামলার বিষয়ে জানতে নৌকার প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরীকে বারবার কল করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার ঘনিষ্ঠরা জানান, শপথ অনুষ্ঠানে থাকায় তার ফোন বন্ধ রয়েছে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামন জাগো নিউজকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু হামলার শিকার কোনো ভুক্তভোগী এখনো পুলিশকে অভিযোগ জানায়নি।
নোয়াখালী-৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এক লাখ ২৮ হাজার ৭৬৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৫৭৩ ভোট।
এ আসনে মোট ভোটার ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৯ জন। এরমধ্যে ১৯৬ কেন্দ্রে গৃহীত বৈধ ভোটের সংখ্যাে এক লাখ ৭৮ হাজার ২২২ ভোট। ভোটগ্রহণের হার ২৬.৯৪ শতাংশ।
ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/জিকেএস