ভোট নিয়ে যা ভাবছে ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণরা

তানভীর হাসান তানু তানভীর হাসান তানু ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৯:২৪ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪
ফাইল ছবি

আর একদিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। এখন শুধু ভোটগ্রহণের অপেক্ষা। তবে এই নির্বাচনে তেমন আগ্রহ নেই তরুণ ভোটারদের। ঠাকুরগাঁওয়ে একাধিক তরুণ ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা নতুন ভোটার ছিলেন বিশেষ করে তাদের মাঝে কোনো আগ্রহ নেই ভোট প্রদানের। সেবার ভোট দিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেসময়ের নতুন ভোটার আহমেদ ইফতেখার। তিনি বলেন, গত বছর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারিনি, তাই এবছর ভোট দিতে গিয়ে একই ঘটনার সাক্ষী হতে চাই না।

এবার প্রথম ভোটাধিকার প্রদান করবেন জয় চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করি তাহলে এই ভোটের কোনো মূল্য আমি দেখছি না। ভোটারের মূল্য আমার কাছে লক্ষ্যণীয় নয়। যখন ভোটার ছিলাম না, তখন দেখতাম উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চলতো। কিন্তু এ বছর তেমন উৎসবমুখর পরিবেশ দেখছি না। ভোট সুষ্ঠুভাবে হবে কিনা সংশয় রয়েছে।

শহরের নারী ভোটার রাজিয়া সুলতানা বলেন, ভোটকেন্দ্রে যে পরিমাণ নিরাপত্তা দরকার তা থাকে না। আমার যথেষ্ট সংশয় থাকবে, কারণ ভোটের দিন একটি রাজনৈতিক দল হরতালের ডাক দিয়েছে। আমি আমার ভোট প্রদান করতে যাবো কিসের নিরাপত্তা মাথায় রেখে?

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই যেন সহিংসতা, মারামারি আর লাশের মিছিল। আমরা তরুণ প্রজন্ম এ ধরনের নির্বাচন প্রত্যাশা করি না।

তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচন, এমন কোনো নির্বাচন নেই যেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি এবং মানুষ মারা যায়নি। কোনো মৃত্যুর বিচার আমরা লক্ষ্য করিনি। নিশ্চয়ই ভোটের থেকে আমার কাছে আমার জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই সবদিক বিবেচনা করে যদি বলি, আমি ভোট দিতে খুব বেশি আগ্রহী নই।

তরুণ ভোটার কিশোর রায় বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ কথা বলে আসছেন নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু আমরা তার বক্তব্যেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা এমন সন্দেহ লক্ষ্য করছি। পরিবারের অভিভাবকরা বলছেন, ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা হতে পারে। এমন সন্দেহ থেকে আমাদের অভিভাবকরা ভোটের দিন আমাদের ঘর থেকে বের হতে দেবে কি না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান রয়েছি।

সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের তরুণ ভোটার রাজীব বিশ্বাস বলেন, আমরা আমাদের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন তরুণ প্রার্থী যে নতুন প্রজন্মকে বুঝবে এমন প্রার্থীকে খুঁজবো। আমার কাছে মনে হয়েছে তরুণদের কথা মাথায় রেখে প্রার্থী দেওয়া হয়নি। আমরা তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই তরুণ প্রার্থী খুঁজবো। কিন্তু তা পাইনি। তাই ভোট দিতে আগ্রহ হারাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সমাজকর্মী রকিবুল হাসান বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে যেমনটা দেখেছি মানুষকে ভোট দিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার আমরা লক্ষ্য করছি মানুষকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান করা হচ্ছে। এমনটা নয় যে গত বছর ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান করা হয়নি। কিন্তু সর্বশেষ আমরা দেখেছি মানুষ তার ভোট প্রদান করতে পারেনি। বাংলাদেশের ভোটের সিস্টেম এবং নির্বাচন কমিশন এই আস্থা ধরে রাখতে পারেনি। তাই তরুণ ভোটাররা ধীরে ধীরে নির্বাচন এবং রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এটা একটা দেশের জন্য অশুভবার্তা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর ঠাকুরগাঁও শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, তরুণরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নেই। তাই নতুন বা তরুণ ভোটাররা ভোটে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তরুণরাই আগামীর শক্তি, তাদেরকে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ প্রদান করলে আগামী দিনগুলো ভালো যাবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ২৭ হাজার, নারী ভোটার ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৩৪ জন তরুণ ও নতুন ভোটার।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।