হোটেলে ডিজে আর বেলাভূমিতে নেচে-গেয়ে নতুন বছর বরণ
২০১৭ সালের পর সপ্তমবারের মতো এবারও থার্টিফাস্ট উদযাপনে কক্সবাজারে উন্মুক্ত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবুও ২০২৩ বর্ষকে বিদায় ও নতুন বছর ২০২৪ কে বরণ করতে সৈকতের বেলাভূমিতে সমবেত হয়ে নেচে-গেয়ে উন্মাদনা ছড়িয়েছেন অগণিত পর্যটক এবং স্থানীয় বিনোদনপ্রেমীরা।
এসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইনডোর প্রোগ্রামে বর্ষবরণ করেছে তারকা হোটেলগুলো। গভীর রাত পর্যন্ত বাদ্য বাজনা ও ডিজের তালে নেচে গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান হোটেলে অবস্থান করা অসংখ্য পর্যটক।
সরকারি নির্দেশনায় উন্মুক্ত অনুষ্ঠান ও আতশবাজি নিষিদ্ধ ছিল। এরপরও রাতের সৈকতে সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে উন্মাদনা দেখায় পর্যটক ও স্থানীয়রা।
৩১ ডিসেম্বর রাতে সৈকতের বেলাভূমি ও তারকা হোটেলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। এ সময় ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ, র্যাব ও শৃংখলা বাহিনীর সকল বিভাগের সদস্যদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল উল্লেখ করার মতো।
আগে থেকেই তারকা হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। আয়োজন করা হয় সুস্বাদু খাবার, নানা পদের আইটেমে গালা ডিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসে রাত আটটার পর থেকেই শুরু হয় বছরের শেষদিন উদযাপন। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য রাখা হয় বিভিন্ন আইটেমের খাবার ও পানীয়। ডিজের বাজনায় কোমর দুলিয়ে নাচেন হোটেলে অবস্থান করা পর্যটকরা। যোগ দেন বিদেশি পর্যটকরাও।
একই রকম আয়োজন করে সৈকতের অভিজাত হোটেলসহ অনেক গেস্ট হাউজের ছাদে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে নিজেদের মনের হতাশা তাড়ান সবাই। এছাড়াও সকল পর্যটন স্পটে এবং ইনানীর ইকো রিসোর্টসহ শহরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
থার্টিফার্স্ট উদযাপনে আগে থেকে কক্সবাজার এসে অবস্থান নেন বিনোদন প্রেমী অনেক পর্যটক। তবে শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁ, রাস্তাঘাট ও বিপণিকেন্দ্রে আগের মতো ভিড় ছিল না। অন্য বছরের মতো পর্যটকদের সঙ্গে বর্ষবরণে যোগ দেয় স্থানীয় যুবারাও।
বছরের শেষ দিনে পর্যটকরা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ইনানী, হিমছড়ি, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, মহেশখালীসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়িয়েছে। গতবার বন্ধ থাকলেও এবার জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক থাকায় প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে উল্লেখ করার মতো পর্যটক ছিল। দ্বীপে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা, এমনটি জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে বেড়াতে এসে ওশান প্যারাডাইস হোটেলে অবস্থান করা সাইফুল ইসলাম দম্পতি বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষবরণের সাক্ষী হলাম আমরা। বলরুমে আগের মতো জমজমাট আয়োজনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করে দেয় ওশান প্যারাডাইস। সুব্যবস্থাপনায় কোনো উচ্চবাচ্য ছাড়াই নেচে-গেয়ে রাত দেড়টা পর্যন্ত আনন্দ করেছি হোটেলে অবস্থান করা সকল পর্যটক। আমাদের সঙ্গে যোগদেন বিদেশিরাও। তবে একে ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’ বলা চলে। কারণ- খোলা মঞ্চের আয়োজন আর বদ্ধ রুমের আয়োজনের তফাত অনেক।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, অনুষ্ঠান না থাকলেও আমাদের ধারণা ছিল বিপুল পর্যটক সমাগম হবে নতুন বছর বরণে, হয়েছেও তাই। কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্টে লোকসমাগম ছিল রাত ২টা পর্যন্ত। তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য বিভাগও নিশ্ছিদ্র পাহারা বসায়। সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা হয় ইনডোর প্রোগ্রাম করা তারকা হোটেলগুলোতেও।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবেই ২০২৪ বর্ষবরণ হয়েছে কক্সবাজারে। সৈকতে পর্যটকসহ স্থানীয়রা গভীর রাত পর্যন্ত নিজেদের মতো আড্ডা-গানে সময় কাটায়। সবার জন্য ২০২৪ সাল সুখকর ও সমৃদ্ধের হোক, সেই কামনা করছি।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জিকেএস