বগুড়ায় জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার


প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০১৬

বগুড়ার শেরপুরের জুয়ানপুর কুঠিবাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড ও বিস্ফোরক করা হয়েছে। পরে একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে উদ্ধার করা গ্রেনেডগুলো নিস্ক্রিয় করা হয়।

ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল সোমবার সকাল ৯টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরকগুলো উদ্ধার করে। বোমা বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্ব দেন ক্রাইম ডিভিশনের সহকারী কমিশনার রহমতুল্লা চৌধুরী। তার সঙ্গে আরো আটজন চৌকস সদস্য এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান দুপুরে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে জানান, চার কক্ষ বিশিষ্ট একতলা বাড়িটি জঙ্গি দলের সদস্যরা বোমা তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি সন্দেহ করা হচ্ছে জেএমবিকে। কারণ এই অঞ্চলে এর আগেও একই ধরনের তৎপরতার সঙ্গে জেএমবি জড়িত ছিল।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ২০টি রেডি গ্রেনেড, চারটি বিদেশি পিস্তল, ৪০ রাউন্ড গুলি, তিন শতাধিক গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম ও দেড় বস্তা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক (নাইট্রোজেল) উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে সেখানে একটি মোটরসাইকেল একটি বাইসাইকেলসহ বেশ কিছু জমির দলিলপত্র, ব্যাংকের চেকবই ও অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।

বেলা ১২টা থেকে বোমা বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য জঙ্গি আস্তানার কাজে ব্যবহৃত বাড়ির সামনের একটি মাঠে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে এক এক করে ২০টি গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে নিস্ক্রিয় করে। আর দেড় বস্তা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক (নাইট্রোজেল) সেখানে বিস্ফোরণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিকেলে সেটি যমুনার দুর্গম চরে নিয়ে গিয়ে বিস্ফোরণ করা হয়।

bogra

বোমা বিশেষজ্ঞ টিমের প্রধান সহকারী কমিশনার রহমতুল্লা চৌধুরী জানান, গ্রেনেডগুলো যে ফমুলায় তৈরি করা হয়েছে সেই কাজটি একমাত্র জেএমবি করে থাকে। এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে জেএমবির আস্তানা থেকে স্থানীয়ভাবে তৈরি যেসব গ্রেনেড পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে বগুড়া উদ্ধার করা গ্রেনেড মিলে গেছে।

স্থানীয়ভাবে নাইট্রোজেল ও ডেটোনেটর ব্যবহার করে তৈরি করা এই গ্রেনেডের কার্যক্ষমতা বাড়াতে জঙ্গিরা লোহার বল, পেরেক ও তারকাঁটার মতো বস্তু স্প্রিন্টার হিসেবে ব্যবহার করে। এর কারণে এটি ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বেড়ে যায় বহুগুণ। ৫ থেকে ১০ মিটার এলাকায় যে কোনো বস্তু ও মানুষকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করার ক্ষমতা এই গ্রেনেডের রয়েছে।

সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শেরপুর ঢাকা মহাসড়কের গাড়িদহ এলাকায় মহাসড়ক থেকে মাত্র কোয়ার্টার কিলোমিটার মাটির রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই জুয়ানপুর গ্রাম। গ্রামের প্রথম বাড়িটিই মাহবুবর রহমানের। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এবং বাড়িটির পেছনে দিকে পালানোর মতো একাধিক পথ থাকায় জঙ্গিরা এই বাড়িটি সিএনজি চালকের ছদ্মবেশে ভাড়া করে।

এরপর সেখানে অবস্থান করে শক্তিশালী গ্রেনেড তৈরির কাজ চালিয়ে যায়। সোমবার সেখানে পুলিশ ও বোমা বিশেষজ্ঞ টিম ছাড়াও, র্যাব, পিবিআই, সিআইডি, ডিএসবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই সময় জঙ্গি আস্তানার কাজে ব্যবহৃত বাড়িটিসহ আশেপাশের এলাকা ক্রাইম সিনের বেল্ট লাগিয়ে জনচলাচল সীমিত করা হয়।

উল্লেখ্য, রোববার রাত ৮টার দিকে বগুড়া শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর কুঠিবাড়ি গ্রামের একটি বাড়িতে গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক জনের মৃত্যু হয়। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ নিহত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি।

এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।