ময়মনসিংহ-৪
‘নৌকা ছেড়ে’ স্বতন্ত্রে ভরসা জেলা-মহানগর আ’লীগ নেতাদের
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ছেড়ে স্বতন্ত্রেই ভরসা রাখছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আর্বিভাব’ নামের সামাজিক সংগঠন।
সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এসময় তারা মেয়রের বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীমের পক্ষে ভোট চান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনে কারো পক্ষে কাজ করতে হবে আমাদের এমন কোনো বাঁধা নেই। শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, যা ইচ্ছা তাই করো। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য, একটি আলোচিত নির্বাচনের জন্য, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য। পৃথিবীকে দেখাতে হবে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শামীম সাহেব নির্বাচিত হওয়ার পর কোথায় যাবেন, শেখ হাসিনার কাছেই তো যাবেন।’
ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘শামীম সাহেব নেওয়ার জন্য নির্বাচনে আসেন নাই, দেওয়ার জন্য এসেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আপনারা আমার মামার বন্ধু, আমার ভাইয়েরও বন্ধু, কারণ তারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আপনাদের কাছে ভাগ্নে হিসেবে, ভাই হিসেবে, করজোড়ে অনুরোধ করছি সদরকে (৪ আসন) বাঁচান।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আহবান জানাবো, আপনারা সবাই বিবেক দিয়ে চিন্তা করেন, কাকে দিয়ে এলাকার উন্নতি হবে। যদি মনে করেন, শামীমকে দিয়ে হবে, এটি একটি পুরোনো শহর, নদের ওইপাড়ে বিভাগীয় শহর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত হয় নাই। একবার চিন্তা করে দেখেন। অত্যাধুনিক শহর হওয়ার কথা ছিল, কেন হয় নাই? এই জিনিসিগুলো ভাবতে হবে আপনাদের। পুরোনো এই শহরে বিভাগের চার জেলার লোকজনের চাপ বেড়েছে। তাই আসুন, আমিনুল হক শামীম সাহেবকে নির্বাচিত করে বসবাসের জন্য নদের ওইপাড়ে নতুন শহর গড়ে তোলার সুযোগ করে দেই।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই প্রত্যেক আসনে ৮-১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা উপযুক্ত তাদের বেছে নেবেন আপনারা। এই সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং আমি আহ্বান জানাবো, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে যে উপযুক্ত তাকে বেছে নেবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীম বলেন, করোনাকালীন আপনাদের পাশে ছিলাম। সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়েছি। আজকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী যিনি তখন তিনি কোথায় ছিলেন? সরকারের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে আপনাদের ভোটের মূল্য দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নৌকা হচ্ছে শেখ হাসিনার মার্কা। আজকে যারা ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কথা বলছেন, বুঝতে হবে তারা নৌকার বিপক্ষে কাজ করছেন।
নৌকার প্রার্থী আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়রের কারো পক্ষে ভোট চাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি যদি সেটি করে থাকেন, তাহলে কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ-৪ আসনে ১০ প্রার্থী রয়েছেন। তবে মূলত লড়াইটা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম ও নৌকার মোহিত উর রহমান শান্তর সঙ্গে।
অন্যরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, (কাচি) জাতীয় পার্টির আবু মুসা সরকার (লাঙল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পরেশ চন্দ্র মোদক (গামছা), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সেলিম খান (একতারা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হামিদুল ইসলাম (আম), তৃণমূল বিএনপির দীপন চন্দ্র গুপ্ত (সোনালী আঁশ), তরিকত ফেডারেশনের বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি (ফুলের মালা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবদুল মান্নান (ডাব)।
মঞ্জুরুল ইসলাম/জেডএইচ/এএসএম