ইউএনওর বিদায়ে কাঁদলেন শত মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:০৮ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

অডিও শুনুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় উপজেলা শিবগঞ্জ। গতবছরের ১২ মে থেকে এ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আবুল হায়াত। সম্প্রতি তাকে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ছিল তার বিদায় বেলা। এ উপলক্ষে তাকে সংবর্ধনার আয়োজন করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠন। অনুষ্ঠানে ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন শত শত সাধারণ মানুষ। পরে শেষ বিদায় নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আবুল হায়াতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন অনেকে। এতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো উপজেলা চত্বর। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানানো হয় ইউএনওকে।

উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শামীম আলী। তিনি একজন প্রতিবন্ধী। ইউএনও আবুল হায়াত চলে যাচ্ছেন শুনে বিদায় জানাতে এসেছেন। তবে তিনি অবহেলিত হননি। ইউএনওকে জড়িয়ে ধরে ধরে কয়েক মিনিট কান্না করতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষকদের ইংরেজি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইউএনও

শামীম আলী বলেন, ‘ইউএনও স্যার আমার মতো একজন প্রতিবন্ধীকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। আমি যেকোনো সময় এসে তার কাছে মনের কথা বলতে পারতাম। এটি আমার কাছে অনেক।’

উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভিক্ষুক জেন্টু মিয়া বলেন, ‘আমার জন্মের কিছুদিন পরই দুই পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। দুই পা হারিয়ে পথে-ঘাটে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলাম। গত ১৭ অক্টোবর রাতে নিজের শেষ সম্বল ভিক্ষা করা ভ্যানটি বাড়ি থেকে চুরি হয়ে যায়। এতে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম আমি। বন্ধ হয়ে যায় ভিক্ষাবৃত্তি। তবে ইউএনও স্যার আমার বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে একটি নতুন ভ্যান কিনে দিয়েছেন। এখন আমি ফের চলাফেরা করতে পারছি। তাই ইউএনওকে শেষবারের মতো দেখতে এসেছিলাম।’

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার খানপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলী হাসান বলেন, ‘ইউএনও স্যার অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। সবসময় তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন।’

আরও পড়ুন: ভিক্ষার ভ্যান হারিয়ে দিশেহারা জেন্টু, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

চককীর্তি ইউনিয়নের আল-মামুন বলেন, ‘আমার সংসার চলছিল না। ইউএনও স্যার আমাকে একটি দোকান করে দিয়েছেন। এ দোকান থেকেই আমার সংসার চলছে এখন। তাই শেষবারের মতো স্যারকে দেখতে এসেছি।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন আব্দুল মজিদ, আব্দুল হামিদসহ কয়েকজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। তারাও নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি। ইউএনওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন তারাও।

তারা বলেন, ‘যেকোনো প্রয়োজনে আমরা ইউএনওকে পাশে পেয়েছি। সাধারণ মানুষও তারা কাছে এসে নিজেদের কষ্টের কথা বলতে পারতেন। এজন্যই মূলত সবাই কেঁদেছেন।’

সদ্যবিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যেগুলো করেছি আমার দায়িত্ব মনে করেই করেছি। একজন ইউএনওর কাছে মানুষ কিছু প্রত্যাশা নিয়ে আসে। তাই তাদের কথা মন দিয়ে শুনে পাশে দাঁড়িয়েছি। এতেই আমি অনেক খশি।’

শিবগঞ্জ উপজেলায় নতুন নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন এএফএম আবু সুফিয়ান।

সোহান মাহমুদ/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।