বেকার স্ত্রীও কোটিপতি
হঠাৎ এমপি হওয়া বাবলুর সম্পত্তি বেড়েছে ৭২৪ গুণ
পাঁচ বছর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগীর বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা। স্ত্রী ছিলেন বেকার। এখন ভোটে জিতে এমপি হওয়ার পর সেই বাবলুর সম্পদ বেড়েছে ৭২৪ গুণ। বেকার থেকেই স্ত্রী বিউটি বেগম হয়েছেন কোটিপতি। রয়েছে ১ হাজার বর্গফুটের সুউচ্চ ভবন। চলাফেরা করার জন্য রয়েছে নিজ নামে গাড়ি।
রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী বগুড়ার আলোচিত একটি নাম। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে হেরে পরের বার লড়েন ইউপি চেয়ারম্যান পদে। সেখানেও পরাজিত হয়ে থেমে যাননি। ২০০৯ সালে যোগ দেন উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার লড়াইয়ে। ভোট পান মাত্র ১৭টি। তারপরও মাটি কামড়ে পড়েছিলেন ভোটের মাঠে। গত জাতীয় সংসদের ভোটে সব হিসাব-কিতাব বদলে দিলেন রেজাউল করিম বাবলু। জিরো থেকে হলেন হিরো। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার আগে তার বাক্সে পড়ে এক লাখ ৯০ হাজার ভোট।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে না পারায় এবং মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সেবার আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলুকে সমর্থন দেয় বিএনপি। ফলে এক রাতের ব্যবধানে সংসদ সদস্য হন তিনি। ভাগ্যের ফেরে এমপি হওয়ার পর নিজেকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলতে পিছপা হননি তিনি। এলাকাবাসীর নানা প্রতিবাদ, বিক্ষোভ পেছনে ফেলে দুহাতে যে টাকা কামিয়েছেন তার প্রমাণ এবারের হলফনামা। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে বাবলু পরিবারের এমন উত্থান স্তম্ভিত করেছে তার নির্বাচনী এলাকা শাজাহানপুর-গাবতলী এলাকার সাধারণ মানুষকে।
পাঁচ বছর আগে বাবলু হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তার বার্ষিক আয় ৫ হাজার টাকা। ভোটে দাঁড়ানোর আগে জমা টাকা ছিল ৩০ হাজার। চলাফেরা করতেন একটি পুরোনো মোটরসাইকেলে। আর বর্তমানে তিনি দুটি গাড়িতে চড়েন। একটি নিশান এক্সট্রেইল জিপ। অন্যটি ল্যান্ডক্রুজার। দুটির দাম এক কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার। সব মিলে বর্তমানে তার সম্পদ ১ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ টাকা।
আগের ব্যবসা ও সাংবাদিকতা পেশা থেকে এবার শুধু ব্যবসায়ী বনে গেছেন বাবলু। তথ্য অনুসারে সাংবাদিকতা আর করেন না তিনি। এসএসসি পাস করা এই ব্যক্তি এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কমিশনে দেওয়া হলফনামায় নিজের পেশা ইট, বালু, সিমেন্টসহ অনলাইন ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। তখনকার ৫ হাজার টাকার বার্ষিক ও ৪১৭ টাকার মাসিক আয় এখন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বর্তমানে তার ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। অর্থাৎ এখন তার মাসে আয় তিন লাখ ২ হাজার ২৮ টাকা। এই হিসাবে আয় বেড়েছে ৭২৪ গুণের বেশি।
পাঁচ বছর আগে বাবলুর হলফনামায় আয়ের উৎস বলা হয়েছিল কৃষি ও ব্যবসা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে বছরে আসতো ৩ হাজার টাকা। আর ব্যবসা থেকে বছরে আয় হতো ২ হাজার টাকা। নির্বাচনের আগে তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৩০ হাজার। ব্যাংকে জমার পরিমাণও ৩০ হাজার টাকা। তার মোটরসাইকেলের মূল্য ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ ছিল।
এখনো কৃষিখাতে তার কোনো আয় নেই। বাড়িভাড়া থেকে পান ১ লাখ ৮০ হাজার। ইট, বালু, সিমেন্ট ও অনলাইন ব্যবসা থেকে বছরে আয় ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এমপি হিসেবে প্রাপ্ত আয় ও আনুতোষিক ২৩ লাখ ২৪ হাজার ২২৫ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার নগদ টাকা ছিল ৩০ হাজার। বর্তমানে তার নিজ নামে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আছে। আগে তার ৫০ হাজার টাকা দামের গাড়ি ছিল। এখন এক কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের দুটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন তিনি।
গতবারের হলফনামা অনুসারে নিজের নামে বাবলুর ৫ লাখ টাকার দালান ছিল। এবার সেই দালানের কোনো হদিস নেই হলফনামায়। তার স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আবাসিক ভবন থাকার কথা বলেছেন হলফনামায়। আগে বাবলুর কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ছিল না। এবার তার নামে ১৫ লাখ টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট হয়েছে।
বগুড়ার আলোচিত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো প্রকল্পের নথিতে টাকা ছাড়া সই না করার অভিযোগ রয়েছে। এলাকার লোকজন বলেন, মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, মন্দির কোনো কিছুতেই তিনি ছাড় দেননি। ধর্মীয় কাজেও তাকে আগাম টাকা দিতে হয়েছে। এবার বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ২৫ জনের মধ্যে ১৬ জনই স্বতন্ত্র।
কী করে ৫ বছরে এতো সম্পদ করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ব্যবসা করেছি, টাকার মালিক হয়েছি। আমি অবৈধ কোনো কিছু করিনি। সব তথ্যের ব্যাখ্যা হলফনামায় দেওয়া আছে। আমার স্ত্রীর ব্যাপারটিও একই। এসব ব্যাপারে কথা বলতে চাই না।
এফএ/জেআইএম