দশ বছরে সম্পদের ‘পাহাড়’ গড়েছেন নিক্সন চৌধুরী
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন, সদরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ২০১৪ সালে প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। সেবার তার দাখিল করা মনোনয়নপত্রের হলফনামায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল মাত্র ০.৩৮ শতাংশ। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দাখিল করা মনোনয়নপত্রের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কৃষিজমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৩৯.২৮ শতাংশ, যা আগের ৫৪ গুণ। এছাড়া বেড়েছে তার অকৃষি জমি, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এবং বার্ষিক আয়। এ সম্পদ তিনি গড়েছেন টানা ১০ বছর সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায়।
নিক্সন চৌধুরী তৃতীয়বারের মতো ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি ২০১৪ সালে প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীকে এবং ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সিংহ প্রতীকে জয়লাভ করেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।
তিনি স্বাধীন বাংলা সার্ভিসিং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের অংশীদার, নীপা পরিবহন ও রীতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের পরিচালক এবং এন ডেইরি ফার্ম, এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজের প্রোপ্রাইটর। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস।
বর্তমানে নিক্সন চৌধুরীর স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ মিলে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৯১ হাজার ৮৭৩ টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে এবং সোনা রয়েছে ৩০ তোলা। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৯৭ হাজার ২৪২ টাকা মূল্যের সম্পদ এবং ৫০ তোলা সোনা।
দশ বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের হলফনামায় কৃষিজমির পরিমাণ ০.৩৮ শতাংশ উল্লেখ করা থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় কৃষিজমির পরিমাণ তিনি দেখিয়েছেন ২০৪২.৫৬২৫ শতাংশ। এরমধ্যে ২০৩৯.২৮ শতাংশ করেছেন নিজ এলাকা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ায়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় দেখা যায়, ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৩০ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে তার। স্থাবর সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন কৃষিজমির পরিমাণ ০.৩৮ শতাংশ, অকৃষি জমির পরিমাণ ১৭.১০ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে ৭.৫ কাঠা ও একটি ফ্ল্যাট। সে সময় তার ছিল না কোনো গাড়ি এবং প্লট ও ফ্ল্যাট।
এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৮ টাকা এবং ৩০ তোলা সোনা। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে ৬ কোটি ৪৬ লাখ ০৬ হাজার ৪০ টাকা এবং সোনা রয়েছে ৫০ তোলা। যার মধ্যে সংসদ সদস্য হয়ে ৫ বছরে নিজ নামে করেছেন প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং স্ত্রীর নামে সম্পূর্ণটা করেছেন এই মেয়াদে। স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষিজমির পরিমাণ উল্লেখ করেন নিজ নামে ভাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় ৯৭৫.২৩ শতাংশ এবং ঢাকার সাভারে ৩.২৮২৫ শতাংশ। এরমধ্যে ৫ বছরেই কৃষিজমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৬ গুণ। এছাড়া নিজ নামে মাদারীপুরের শিবচরে করেন ৫ কাঠার প্লট, রাজউক পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট এবং বনানী ও গুলশানে একটি করে ফ্ল্যাট।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা যায়, নিজের নামে ও স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় করেছেন তিনি। অস্থাবর সম্পদ করেছেন ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৭৭ টাকা মূল্যের এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৪২ টাকার সম্পদ।
তিনটি নির্বাচনের হলনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, দশ বছরেই নিক্সনের কৃষিজমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ গুণ, স্ত্রী হয়েছেন কোটিপতি, যা রীতিমতো আঙুল ফুলে কলাগাছের মতো।
হলফনামায় উল্লেখ করেন, বর্তমানে তার নামে ভাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় কৃষিজমি রয়েছে ২০৩৯.২৮ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে সাভারে রয়েছে ৩.২৮২৫ শতাংশ। প্রথমবার নির্বাচনে তার কৃষিজমি ০.৩৮ শতাংশ থাকলেও বিগত দশ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ গুণ।
এছাড়া মাদারীপুরের শিবচর হাউজিং প্রকল্পে ৫ কাঠা প্লট, ঢাকার আদাবরে ০.০১২১৫ একর অকৃষি জমি, শিবচরের দত্তপাড়ায় ০.৩৮ শতাংশ অকৃষি জমি, বনানীতে ফ্ল্যাট (৮১ শতাংশ) ও ঢাকা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাট, ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়ায় দোতলা বাড়ি, গুলশানে ৪৮৯১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং হাউজ-১৬, রোড ৭৯ তে আরেকটি ফ্ল্যাট। এগুলো রয়েছে তার নিজ ও স্ত্রীর নামে। যার মধ্যে উত্তরাধিকার ও হেবা সূত্রের সম্পদও রয়েছে।
এছাড়া তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন, বর্তমানে তার নগদ অর্থ রয়েছে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে ৭ কোটি ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকা, ৯১ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি, ৩০ তোলা অলংকার, ৯ লাখ ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী, ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার আসবাবপত্র, ১ লাখ ১০ টাকার বন্দুক/পিস্তল এবং ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার পিয়ানো। এছাড়া পাঁচটি প্রাইভেট কোম্পানিতে শেয়ার হিসেবে রয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
তার স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকা, ব্যাংকে ৭ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ টাকা, সাড়ে ৪ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী এবং ৫০ তোলা সোনা, আইপিডিসি ফাইন্যান্সে বিনিয়োগ রয়েছে ২৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫১ টাকা এবং পাঁচটি প্রাইভেট কোম্পানিতে শেয়ার রয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা।
এন কে বি নয়ন/এফএ/জিকেএস