২০ বিঘা জমির দাম দুই হাজার টাকা দেখালেন এমপি মকবুল
পাবনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মকবুল হোসেন ২০ বিঘা জমি কিনেছেন মাত্র দুই হাজার টাকায়। প্রতি বিঘা জমির দাম পড়েছে ১০০ টাকা। তিনি তার হলফনামায় স্থাবর সম্পত্তির ঘরে এতথ্য দিয়েছেন।
পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, মকবুল হোসেনের মোট সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭১০ টাকা। এরমধ্যে আয় ৩২ লাখ সাত হাজার ৫১০ টাকা। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে দুই কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছে ১৩ লাখ ২২ হাজার ২০০ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে মকবুল হোসেনের স্ত্রীর নামে রয়েছে এক লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ৯০ একর জমি, পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ও পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের দালান। স্ত্রীর নামে ১৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এমপি মকবুল হোসেন নিজের ব্যবহৃত আসবাবপত্র হিসেবে দেখিয়েছেন দুটি খাট, দুটি আলনা, ড্রেসিং টেবিল একটি ও সোফা এক সেট। যার মূল্য মাত্র দুই হাজার টাকা। ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দুটি ফ্রিজ, দুটি টিভি ও ১০টি ফ্যান। এগুলোর মূল্য দেখিয়েছেন ৫৩ হাজার টাকা।
হলফনামায় অস্থাবর সম্পত্তির ঘরে তিনবারের এ সংসদ সদস্য উল্লেখ করেন, কৃষিখাত থেকে তার আয় এক লাখ ১৬ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে আয় পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৫১০ টাকা, জমি লিজ দিয়ে পান দেড় লাখ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত নগদ অর্থ এক কোটি ৬৭ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, স্ত্রীর নামে ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং নিজের মোটর কারসহ পরিবহনের মূল্য ধরেছেন ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সম্পদ আছে দুই লাখ তিন হাজার টাকার।
হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস ও পেশা হিসেবে ‘জোতদার’ উল্লেখ করেছেন মকবুল হোসেন। তার নামে কোনো মামলা নেই। প্রতিশ্রুতি অর্জনের বিষয়ে এ সংসদ সদস্য উল্লেখ করেন, বিগত নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণ করেছেন।
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি পাবনার সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমির দাম ১০০ টাকা! এখন অবিশ্বাস্য ব্যাপার। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি এই ২০ বিঘা জমি ১৯৭২ সালে কিনেছি, তখন ১০০ টাকা বিঘা ছিল। সেইসময় থেকে আয়কর ফাইলে এ জমির মূল্য যেভাবে ধরা হয়েছে আমি সেভাবেই তথ্য দিয়েছি।’
জানতে চাইলে পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচনী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আয়কর ফাইলে যেভাবে মূল্য ধরা আছে হয়ত সেভাবেই তিনি দিয়েছেন।’
বর্তমান মূল্য দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’
পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।’
পাবনা-৩ আসনে মকবুল হোসেন ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রাথী হয়েছেন চাটমোহর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টার, মীর নাদিম মোহাম্মদ ডাবলু (জাতীয় পার্টি), মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি), বেলাল মোল্লা (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), খায়রুল আলম (গণতন্ত্রী পার্টি), কামরুজ্জামান মো. হাদী (জাকের পার্টি) ও আবুল বাশার শেখ (জাসদ)।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এসআর/জিকেএস