শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল

১১ মাস ধরে হিমঘরে ভারতীয় দুই বন্দির মরদেহ, বিল সাড়ে ৯ লাখ

বিধান মজুমদার
বিধান মজুমদার বিধান মজুমদার , জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

হস্তান্তর জটিলতায় ১১ মাসের অধিক সময় ধরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে দুই ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ। এতে মরদেহ দুটির ফ্রিজ মরচুয়ারি ভাড়া এসে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

দীর্ঘসময় ধরে মরদেহগুলো পড়ে থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও পড়েছে বিপাকে। মরদেহ দুটি সরিয়ে ভাড়া পরিশোধের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আসার পর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলার।

বিজ্ঞাপন

শরীয়তপুর জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, হিমঘরে রাখা দুই ব্যক্তির নাম সতেন্দ্র কুমার (৪০) ও বাবুল সিং (৩৮)। এদের মধ্যে সতেন্দ্র কুমার হরিয়ানা রাজ্যের সাতুরা সুলতানপুর জেলার চেয়াপুর থানার চন্দ্রপালের ছেলে। অপরদিকে বাবুল সিংয়ের বাড়ির কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। সতেন্দ্র কুমারকে গত বছরের ৮অক্টোবর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। অনুপ্রবেশ আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশের করা মামলায় ওই দিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: গরম-লোডশেডিংয়ে ভারতীয় দুই বন্দির মরদেহ পচনের আশঙ্কা

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি সকালে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাগার থেকে দুপুর ১২টার দিকে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মরদেহটি ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়।

অপরদিকে বাবুল সিংকে গত বছরের ১৭ মে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটক করেন। পরে অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দেওয়ার পর ওই দিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল রাতে কারাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তার মরদেহটিও ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

১১ মাস ধরে হিমঘরে ভারতীয় দুই বন্দির মরদেহ, বিল সাড়ে ৯ লাখ

শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, সতেন্দ্র কুমারের মরদেহটি চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি হিমঘরে রাখা হয়। অপরদিকে বাবুল সিংয়ের মরদেহটি ১৫ এপ্রিলে রাখা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করতে না পারায় সদর হাসপাতালের হিমাগারেই মরদেহ দুটি পড়ে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত একটি মরদেহের জন্য প্রতিদিনের ফ্রিজ মরচুয়ারি ভাড়া নির্ধারণ করা আছে ২ হাজার টাকা। সে হিসাবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মরদেহ দুটির হিমাগারের রাখার ভাড়া এসে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মরদেহ দুটির মধ্যে একটি মরদেহ ১১ মাস ধরে ও আরেকটি মরদেহ আট মাস ধরে আমাদের হিমাগারে রাখা আছে। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও মরদেহগুলো গ্রহণ কিংবা ফ্রিজ মরচুয়ারী ভাড়া পরিশোধ করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে মরদেহগুলো এখানে পড়ে থাকায় আমাদের জরুরি প্রয়োজনে অন্য মরদেহ রাখতে সমস্যা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, আমরা মরদেহ দুটির ভাড়া পরিশোধ করতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়েছে। এছাড়া দ্রুত মরদেহ দুটি সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর কারাগারের জেলার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আবু সাদ্দাত জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ১৭ ভারতীয় নাগরিক বন্দি আছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ১৪ জন ও নারী তিনজন।

বিজ্ঞাপন

বিধান মজুমদার অনি/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।