সাগরে ডুবে দম্পতির মৃত্যু

বাবা-মায়ের মরদেহ দেখে স্তব্ধ তিন সন্তান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নাটোর
প্রকাশিত: ০৫:৫০ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

বড় মেয়ের নাম বুশরা, বয়স ১১। এরপর দুই ছেলে আনাস ও ইয়াস। তাদের বয়স ৮ ও ৫ বছর। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টা। অপেক্ষায় তারা তিন ভাই-বোন, কখন আসবে মা-বাবা। মেয়ে বুশরা মা-বাবা জীবিত ফিরবে না বুঝলেও ছোট দুই ভাই জানে কক্সবাজার থেকে তাদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে মা-বাবা।

বাড়ির কোণে রাখা দুটি স্টিলের খাটিয়া দেখে আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরইমধ্যে স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি দুটি কবর খোঁড়া হয়েছে। সেখানেই চিরকালের জন্য শুইয়ে রাখা হবে তাদের মা-বাবাকে।

নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌর শহরের দিয়ারপাড়া এলাকার প্রকৌশলী আবুল কাশেম বকুল (৪২) ও তার স্ত্রী সাবিকুন নাহার সুমা (৩৪) রোববার কক্সবাজারে সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন। বকুল দিয়ারপাড়া এলাকার মৃত বোরহান উদ্দিন আহমেদের ছেলে ও সুমা দিনাজপুর চিরিরবন্দরের সুলতান আলীর একমাত্র মেয়ে।

মৃত বকুলের বড় ভাই আবু তাহের জানান, তার ভাই আবুল কাশেম বকুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এবং সপরিবারে ঢাকার ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় থাকতেন। অফিসিয়াল ট্যুর হিসেবে স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার কক্সবাজারে বেড়াতে যান বকুল। তাদের তিন সন্তানকে নানির কাছে রেখে যান তারা।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের উপ-পরিদর্শক চাঁন মিয়ার বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, রোববার সকালে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে গোসলে নামেন তারা। সেখানে ঢেউয়ের সঙ্গে স্ত্রী সুমাকে ডুবে যেতে দেখে বকুল বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে সি-সেইফ লাইফ গার্ডর কর্মীরা তাদের দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বকুল দম্পতির মৃত্যুর খবরে বাড়িতে শোকে মুহ্যমান পুরো পরিবার। ছেলে ও পুত্রবধূর মৃত্যুর খবরে বকুলের মাসহ স্বজনরা যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। বাবা-মায়ের মেজো ছেলে অত্যন্ত মেধাবী বকুলের এমন মৃত্যু তারা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে এমন মৃত্যুতে স্তব্ধ পুরো পরিবার।

বকুলের মা ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা যাচ্ছেন আর বলছেন, কোথায় আমার বুকের মানিক। তোরা ওকে আমার কাছে নিয়ে আয়। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

বকুলের বড় ভাই আবুল হাশেম জানান, কক্সবাজার থেকে বকুল ও তার স্ত্রীর মরদেহ দুপুরে দিয়ারপাড়া মহল্লার বাড়িতে আনা হয়। এরপর বাদ জোহর প্রথম জানাজা শেষে তাদের গ্রামের বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলার কৈডিমা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ দাফন করা হয়।

অপরদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে বকুলের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান বড়াইগ্রাম পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন। তিনি জানান, তাদের এতিম তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পৌর মেয়র হিসেবে ও পাশাপাশি তাদের চাচা হিসেবে সবসময় পাশে থাকবেন তিনি।

রেজাউল করিম রেজা/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।