জীবনে কথা না বলার প্রতিজ্ঞা রঞ্জিত সাধুর, খাবেন না ভাত
ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। ভাত ছাড়া যেন বাঙালির একটি দিনও চলে না। মানুষ যেখানে ভাত খেয়ে বেঁচে থাকে, সেখানে ১২ বছর না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন রঞ্জিত সাধু। জীবনে কথা না বলা ও ভাত না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি। এরইমধ্যে পেরিয়ে গেছে দুটি বছর। এসময়ে ভাত মুখে দেননি রঞ্জিত সাধু। শুধু তাই নয়, কথাও বলেননি কারো সঙ্গে।
ভারতে তীর্থস্থান ভ্রমণ করতে গিয়ে এমন প্রতিজ্ঞা করেছেন রঞ্জিত সাধু নামের ওই ব্যক্তি। ভাতের পরিবর্তে কলা, ভুট্টার গুঁড়া, চালের গুঁড়া, শাকসবজি খেয়ে একাকী নদীর ধারে বাড়ি ও উপাসনালয় তৈরি করে বসবাস করছেন তিনি। তার বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল বাইটকা টারির এলাকায়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন বছর আগে ভারতে তীর্থস্থান ভ্রমণে যান রঞ্জিত সাধু। পরে সেখান থেকে ফিরে এসে বলেন, সংসার হলো কামনা-বাসনা। সেখানে থেকে ধর্মীয় কাজ সিদ্ধ করা সম্ভব না। তাই সংসারের মায়া থেকে দূরে গিয়ে একাকিত্বভাবে জীবন অতিবাহিত করবেন। সাধুদের কথা না বলাই শ্রেয়। এজন্য তিনি কথা বলবেন না, ভাতও খাবেন না। তবে প্রয়োজনে খাতায় লিখে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন রঞ্জিত।
এ বিষয়ে তার ভাতিজা নন্দী রায় বলেন, ‘কাকা ভারতের সাধুদের জীবনযাপন অনুসরণ করে এমন সংকল্প করেছেন। আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। কারণ আমরা ওনার মতো ধর্মপালন করতে পারি না। তিনি খাদ্য হিসেবে শুধু শাকসবজি, ডাল, ভুট্টা গুঁড়া খেয়ে বেঁচে আছেন।’
রঞ্জিত সাধুর বড় ছেলে হীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘বাবা ভারত থেকে আসার পর জানান, তিনি ১২ বছর বাসায় আসবেন না, কথাও বলবেন না। আরও জানান, তিনি ভাতও খাবেন না। বিষয়টি আমাদের প্রথমদিকে একটু খারাপ লাগলেও এখন আর কষ্ট হয় না।
তিনি আরও বলেন, ‘একাকি বসবাসের জন্য বাবা নদীর পাড়ে খড়ের ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ে ঘরটি ভেঙে গেলে আমরা নতুন করে একটি উপাসনালয় ও থাকার মতো একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দেই।’
‘বাবা পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা করতে যান না। আমরা পরিবারের লোক মাঝে মধ্যে এসে দেখা করে যাই। কিছু বলার থাকলে খাতায় লিখে আশপাশের কারো হাতে দেয়’, যোগ করেন হীরেন্দ্র নাথ রায়।
রঞ্জিত সাধু খাতায় লিখে জাগো নিউজকে জানায়, ‘সংসার হলো কামনা-বাসনা। ১২ বছর পার হলেও আমি আর সংসারে ফিরে যাবো না। এখানে আমি জীবন শেষ করতে চাই। আমাকে যেন সংসারে ফিরিয়ে না নেওয়া হয়।’
এসআর/এএসএম