জ্বালানি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন মোস্তাকের, চলবে পাম্প-ফ্রিজ
জ্বালানি ছাড়াই অটোরিকশার পুরোনো ব্যাটারি ও মোটর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার যুবক মোস্তাক মিয়া। উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকেই মোটরের ব্যাটারিও চার্জ হচ্ছে।
দীর্ঘ দুবছরেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর পুরোনো ব্যাটারি ও মোটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন তিনি। শুধুমাত্র এককালীন অর্থ খরচ করে এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এতে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিলের মতো বাড়তি কোনো খরচ লাগবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২০ কিলো ওয়াটের একটি পুরোনো জেনারেটর, অটোরিকশার পুরোনো একটি মোটর, ৪৮ ভোল্টের চারটি ব্যাটারি, শ্যালো মেশিনের পাঁচটি চাকা, গাড়ির পুরাতন একটি গিয়ার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন মোস্তাক। এই প্রযুক্তিতে প্রায় ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ দিয়ে পাঁচ এসপি (পাঁচ ঘোড়া) পানি উত্তোলনের মোটর, তিন এসপি (তিন ঘোড়া) পানির উত্তোলনে মোটর, ২০০ ওয়াটের পাঁচটি বাতি ও একটি ফ্রিজ চালানো যায়।
মোস্তাক মিয়া উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের পশ্চিম সেরবাজ এলাকার মৃত জয়নাল আবেদিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। পার্শ্ববর্তী সাদেকপুর গ্রামের একটি মোড়ে তার ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র মেরামতের দোকান আছে। সেই কাজের পাশাপাশি ধীরে ধীরে অর্থ যোগাড় করে ইচ্ছা শক্তি কাজে লাগিয়ে এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন।
প্রতিবেশী আলমগীর হোসেন বলেন, ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করছে। দুবছর পর অবশেষে অটোরিকশার পুরোনো মোটর ও ব্যাটারি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন। তার এ আবিষ্কারটি কৃষিতে সেচ পাম্প চালানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। কৃষকদের প্রতি মাসে বিল দিতে হবে না। শুধু এককালীন অর্থ দিয়ে এ প্রযুক্তি স্থাপন করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিনি আলম বলেন, মোস্তাকের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা শুনে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে লোকজন প্রতিদিনই ভিড় করছেন। তারা এ আবিষ্কারটি দেখে তার প্রশংসা করেন।
এনজিও কর্মী মো. আবুল হোসেন বলেন, মৌটুপী গ্রামের মোস্তাক মিয়া ব্যাটারি ও মোটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। সেই উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে দুটি সেচের মোটর, ২০০ ওয়াটের পাঁচটি বাতি ও একটি ফ্রিজ চলছে। তার এ প্রযুক্তি দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন।
তরুণ যুবক মোস্তাক মিয়া বলেন, ২০২১ সালের চট্টগ্রামের মহেশখালীতে অবস্থিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুসকো কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আট মাস চাকরি করেছিলাম। সেখানে চাকরির সুবাদে পুসকো কোম্পানির ইলেকট্রিকেল সুপারভাইজার মো. রিপনের কাছ থেকে প্রথমে ব্যাটারি ও মোটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণাটি মাথায় আসে। সেই ধারণা থেকেই পরবর্তীতে দীর্ঘ দেড় বছর চেষ্টার পর আমার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সফল হয়েছি। প্রযুক্তিটি তৈরি করতে প্রায় ২-৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যদি নতুন সরঞ্জাম ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তাহলে খরচ বাড়বে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনও দ্বিগুণ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিটি ব্যক্তিগতভাবেও করা যাবে তাতে খরচ বেশি পড়বে। যদি জাতীয়ভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তাহলে এতে উৎপাদন খরচ কম পড়বে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচের মোটর পাম্প চালানো যাবে। এতে শুধুমাত্র এককালীন অর্থ ব্যয় হবে। প্রতিমাসে কোনো টাকা খরচ করা লাগবে না।
সাদেকপুর ইউনিয়নের সদস্য মো. তাইবুদ্দিন ভূ্ঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, লোকমুখে শুনেছি মৌটুপী গ্রামের মোস্তাক তেল-পানি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন দেখতে উৎসুক জনতা প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় করছেন। গ্রামের একজন ছেলে তার মেধা দিয়ে আবিষ্কারটা করেছে সেটা তো অবশ্যই গর্বের। তাকে যদি সরকারি কোনো সহযোগিতা দেওয়া তাহলে তার আবিষ্কারটি বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো যাবে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম উপজেলার মৌটুপী গ্রামের একজন যুবক পুরাতন মোটর ও ব্যাটারির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। এ বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করবো।
এসজে/এএসএম