দিনে দুপুরে উধাও পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহ করা ১৩ ট্রাক!

আরাফাত রায়হান সাকিব আরাফাত রায়হান সাকিব , মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

এ যেন দিনে দুপুরে পুকুর চুরি! পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাথর সরবরাহের কাজ শেষে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় জায়গা ভাড়া নিয়ে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের রাখা আস্ত ১৩টি ডম্প ট্রাক উধাও হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে জায়গা ভাড়া নিয়ে ট্রাক আর পাথর রাখার দু’মাস পর সংশ্লিষ্টরা ফিরে এসে দেখেন পাথর থাকলেও নেই একটিও ট্রাক। কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতির সুযোগে কাগজপত্র জাল করে প্রকাশ্যে ট্রাকগুলো কেটে বিক্রি করে দিয়েছের সাবেক ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন উরফে মিজান ও তার সহযোগী মো. আবু তাহের নামের দুই ব্যক্তি।

এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছে ক্ষতিগ্রস্ত ভাই ভাই ট্রেডার্স নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। খোয়া যাওয়া ১৩টি ট্রাকের বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা বলে দাবি তাদের।

সরেজমিনে মাওয়ার কান্দিপাড়া এলাকা ঘুরে জানা যায়, পদ্মা নদীর পাড়ের মাঠ ও পাশের আরেকটি মাঠে পাথরটানার ট্রাকগুলো ছিল। তবে এখন সেখানে কোনো ট্রাক নেই। ট্রাকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাঠের বিভিন্ন স্থানে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগেও ট্রাকগুলো দেখেছিলেন তারা। তাদের দাবি চোখের সামনেই ট্রাকগুলো কেটে বিক্রি করতে দেখেছেন। স্থানীয় সাবেক এক ইউপি সদস্য ঢাকা থেকে লোক এনে ট্রাকগুলো কেটে বিক্রি করেন। কিছু ট্রাক ভালো আর কয়েকটি ছিল বিকল। তবে ট্রাকের প্রকৃত মালিক কে তা কেউ জানে না।

স্থানীয় দোকানী সাহাদাত বলেন, গত ২০ দিন আমার দোকানের সামনে ৭টি গাড়ি (ট্রাক) দেখেছি। কয়েকজন লোক গাড়িগুলো কেটে কেটে বিক্রি করেছে। তবে কে কার গাড়ি কেটে কেজি ধরে বিক্রি করেছে সেটা বলতে পারছি না।

আরেক স্থানীয় দোকানদার বলেন, আমি সব সময় দোকানে বসি না। আব্বা বসেন। ৭টি গাড়ি দেখেছি কয়েকদিন আগে। কয়েকদিন আগে দোকানে এসে দেখি একটি গাড়ি আছে সেটিও ভেঙে কেজি ধরে বিক্রি করছে কয়েকজন।

রিয়াতুল ইসলাম বলেন, আমরা জানতাম কোম্পানির লোক গাড়ি বিক্রি করেছে। এখন শুনলাম অন্য লোকের গাড়ি বিক্রি করেছে। কয়েকদিন আগেই মাঠের মধ্যে ৭-৮টি গাড়ি কেটে কেটে বিক্রি করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে ভাই ভাই ট্রেডার্সের সাইট ম্যানেজার সুমন জাগো নিউজকর বলেন, আমরা মিজান মেম্বারের কাছ থেকে গাড়ি রাখা বাবদ মাঠ ভাড়া নিই। তারা বলেছিল এখানে নিরাপদ। দুমাস আগে কাজ শেষ হওয়ায় প্রতিমাসে নির্ধারিত ভাড়া বাবদ ট্রাকগুলো এখানে রেখে গিয়েছিলাম। আমাদের একটি ছেলেও এখানে দেখাশুনার জন্য ছিল। তবে সে বাসায় চলে গিয়েছে। দু’তিনদিন আগে আমরা এখানে আসি ট্রাক দেখার জন্য, দেখি কোনো ট্রাক নেই। আমাদের ফোন ধরছে না মিজান মেম্বার। মানুষজন বলছে কেটে কেটে ট্রাকগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের অনুপস্থিতির সুযোগেই ট্রাকগুলো বিক্রির নকল কাগজ করে এ কাজ করেছে মিজান মেম্বার। ভাড়া নিয়ে সমস্যা থাকলে আমরা আজ নয় কাল তার ভাড়া দিয়ে দিতাম। ভাড়া আর কত হতো। আমাদের কোটি টাকার গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে। এর আমরা বিচার চাই।

ভাই ভাই ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকার মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবি ব্যাংকের ঋণের টাকা দিয়ে ৩৮টি গাড়ি কেনা হয়েছে। আমাদের কাজ শেষ হওয়ায় সেখানে গাড়িগুলো রেখেছিলাম। ওই জায়গার মালিক আলামীন ও মিজান মেম্বার আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে উত্তমের কাছে ১০টি ডাম্পট্রাক ভেঙে ও কেজি ধরে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। আমি বিদেশে থাকার সুযোগে এই কাজগুলো করেছে। এ বিষয়ে মামলা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাবেক ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন ওরফে মিজানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পদ্মা সেতুর উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ওই স্থানে ট্রাক রাখার বিষয়ে ইতোপূর্বে থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে মিজান মেম্বারসহ দুইজনের বিরুদ্ধে আত্মসাতের মামলা হয়েছে। আবু তাহেরকে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।