স্লুইস গেটের দরজায় ত্রুটি, কৃষকদের ক্ষোভ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সোনাইছড়া পানি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় সেচের আওতায় এসেছে শত একর অনাবাদি কৃষি জমি। একই সঙ্গে প্রকল্প এলাকায় ১০ একরের একটি লেক সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ছে পর্যটক। কিন্তু এক বছর ধরে স্লুইস গেটের দরজার লকে ত্রুটি থাকায় পরিমাণ মতো পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৫০ কৃষককে নিয়ে সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠিত হয়। ওই সমিতির ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কৃষি ঋণ দেওয়া হয়। পরে সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে পাহাড়ের পাদদেশে একটি বাঁধ নির্মাণ ও স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ওই এলাকায় ৪২ শতক জমি অধিগ্রহণ করে এলজিইডি। কিন্তু জমি কম হওয়ায় সোনাইছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি আরও ১০ শতক জমি ক্রয় করে।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে পেঁয়াজের ফলনে খুশি চাষিরা
পরে ৫২ শতক জমিতে চার কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডির দ্বিতীয় ক্ষুদ্রাকার পানি সেচ প্রকল্পের আওতায় বারোমাসি সোনাইছড়ার মুখে বাঁধ নির্মাণ ও পানি আটকানোর জন্য রেগুলেটর স্থাপন করে। পাশাপাশি সাড়ে তিন কিলোমিটার খাল সংস্কার করা হয়। ২০০৮ সালে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ। এরপর সুফল ভোগ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। কিন্তু এক বছর ধরে গেইটের দরজার একটি লক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উপযুক্ত পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা তিন মাস আগে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে লকটি মেরামত করেছে। তবে পুনরায় লকটি বাঁকা হয়ে গেছে। পানি ধরে রাখতে না পারলে এর প্রভাব পড়তে পারে বোরো ও সবজি আবাদে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে সোনাইছড়া লেকের পানি দিয়ে ১৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। এছাড়া শাক সবজিসহ অন্যান্য ফসল আবাদ হয়েছিল ২৫ হেক্টর। কিন্তু স্লুইস গেইটের দরজার লকটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরিমাণ মতো পানি ধরে রাখতে না পারায় কমে যেতে পারে বোরো আবাদ।
আরও পড়ুন: ‘মিধিলি’র তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন বিদ্যালয়, খোলা আকাশের নিচে পাঠদান
উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের ৩৭নং ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমি বিভিন্ন মাঠ পরিসংখ্যান করে ধারণা করছি চলতি বছর সোনাইছড়ি প্রকল্পের পানি ব্যবহার করে ১২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হতে পারে। এছাড়া লেকের পানি দিয়ে ১৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন রকমের শাক সবজি আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি স্লুইস গেইটের দরজার লকটি দ্রুত মেরামত না করা হয় তবে আবাদ আরও কমতে পারে।
স্লুইস গেইটের দরজা বন্ধের দায়িত্বে থাকা সোনাইছড়া প্রকল্পের গাইড মো. ইউসুফ বলেন, তিনমাস আগে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে দরজার লকটি মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু পুনরায় লকের ভেতরে থাকা পাইপটি বাঁকা হয়ে গেছে। তাই দরজা বন্ধ করতে দেরি হয়ে যায়। এতে লেকের পানি বের হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, আগে আমাদের এলাকায় বোরো চাষ হতো না। সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কারণে কয়েক বছর ধরে বোরো আবাদ হচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লেক ও ঝরনা দেখতে ছুটে আসছে। এখানে বনে হরিণ, বানর, হনুমান, সাপসহ বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘খরস্রোতা ঝিনাই নদী এখন শুধুই ইতিহাস’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, চার কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাইছড়া পানি প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে খইয়াছড়া ইউনিয়নের ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এখন বোরো ও রবি শস্য চাষাবাদ হচ্ছে। নষ্ট হওয়ায় ১৪ লাখ টাকায় স্লুইসের গেটের দরজাসহ গেটটি মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বারৈয়ঢালা ন্যাশনাল পার্ক নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. সরওয়ার উদ্দিন বলেন, সোনাইছড়া পানি প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢল থেকে এলাকার কৃষি জমিগুলো রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়া ফলসে বোরো ও শাকসবজি। স্লুইস গেটের দরজায় ত্রুটি বিষয়ে এলজিইডি কার্যালয়ে জানানো হয়েছে।
এম মাঈন উদ্দিন/জেএস/এমএস