মনোনয়নপ্রত্যাশীকে অতিথি করায় অধ্যক্ষকে আটক, ১৪ ঘণ্টা পর মুক্তি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:২৭ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মাদরাসার ওয়াজ মাহফিলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দলের এক নেতাকে প্রধান অতিথি করায় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষকে থানায় ১৪ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে মুচলেকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতার অনুসারীদের মধ্যে ক্ষেভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চর নয়াডাঙ্গী-কিটিংচর জামিয়া জমিরিয়া সিদ্দিকিয়া হায়েত আলী মাদরাসা ও এতিমখানার উদ্যোগে বাদ আসর ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এতে প্রধান অতিথি করা হয় মানিকগঞ্জ-২ আসনে (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের তিনটি ইউনিয়ন) মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ ওরফে টুলুকে। এতে ক্ষুব্দ হয়ে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এর বিরোধিতা করেন। শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে পুলিশ উপজেলার দেউলি গ্রামের বাড়ি থেকে মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মহিউদ্দিন কাসেমীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ১৪ ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মহিউদ্দিন কাসেমী বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামের বাড়িতে আসি। এরপর পিকআপে করে পুলিশ এসে আমাকে থানায় নিয়ে যায়। রোববার দুপুর ১টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ তবে কেন আটক করা হয় জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল আলিম খান বলেন, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম একজন নারী। এ কারণে মাদরাসার ওয়াজ মাহফিলে তাকে অতিথি করা অথবা দাওয়াত দেওয়া হয়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহকারী জাহিদ আহম্মেদকে ওই ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি করায় এমপির অনুসারীরা অনুষ্ঠান পণ্ড করার প্রাঁয়তারা করেন। তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই পুলিশ মাদরাসার অধ্যক্ষকে আটক করে। পরে তিনিসহ ওয়াজ পরিচালনা কমিটিকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরে নেতাকর্মীরা থানায় গেলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।

স্থানীয় জয়মন্টপ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াজ মাহফিল আয়োজক কমিটির সদস্য দারোগালী বলেন, “জাহিদ আহম্মেদকে অতিথি করায় ম্যাডাম (মমতাজ বেগম) আমাদের ডেকে বলেন, ‘জাহিদ আহম্মেদ অতিথি হলে আমার সম্মান থাকে না’। আমরা তাকে (মমতাজ বেগম) বলি, ‘নারী না হলে আপনাকেই ওয়াজ মাহফিলে অতিথি করতাম’। এরপর রাতে জানতে পারি মাদরাসার প্রিন্সিপালকে পুলিশ আটক করেছে।”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রোববার সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি কল ধরেননি।

তবে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক শহিদুর রহমান বলেন, ‘তিনি (জাহিদ আহম্মেদ) তো প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হচ্ছেন। আমরা তো কাউকে বাধা দিচ্ছি না। মাদরাসার প্রিন্সিপালকে (অধ্যক্ষ) আমরাই ছাড়ালাম। এখন আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, মাদরাসার ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তোজনা সৃষ্টি হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতেই অধ্যক্ষকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বি.এম খোরশেদ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।