ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’

মিরসরাইয়ে ১৫০০ হেক্টর আমন ক্ষতিগ্রস্ত

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

অডিও শুনুন

ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে ও তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ক্ষেত। একই সঙ্গে উপজেলার বিভিন্নস্থানে বসতঘরের টিন উড়ে গেছে।

জানা গেছে, মিরসরাই সদর, ইছাখালী, দুর্গাপুর, মায়ানী, ওয়াহেদপুর, জোরারগঞ্জ, সাহেরখালী, ইছাখালীসহ প্রায় ইউনিয়নে কৃষকদের আমন ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে। জমির ওপর উপড়ে পড়েছে গাছপালা। অতিবৃষ্টির ফলে ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘ধারদেনায় চাষ করেছি, বৃষ্টিতে স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেছে’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির পাকা ও আধপাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ৪৪ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি।

Mirsharai1.jpg

মিরসরাই সদর ইউনিয়নের কৃষক মো. মোস্তফা বলেন, আমার প্রায় ১০ শতকের বেশি জমির ধান বাতাসের কারণে নুয়ে পড়েছে। কয়েকদিন পরই ধান কাটার কথা ছিল। শেষ মূহুর্তে এমন বিপর্যয় আশা করিনি। জানি না, ফসলের কেমন ক্ষতি হবে, তবে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।

কৃষক কৃষ্ণ দে বলেন, বাতাসে ১৫ শতকের বেশি জমির ধান নুয়ে পড়েছে এবং জমিতে পানি জমে গেছে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রায় ৩০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছি।

আরও পড়ুন: ফেনীতে দুর্যোগ কবলিত ২৮২ হেক্টর জমির আমন, বন্ধ বিদ্যুৎ সরবরাহ

উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকার খামারি আলা উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমার খামার ও পেঁপে বাগানের সব লণ্ডভণ্ড হয়েছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে আমার। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম ময়ানী গ্রামের কৃষক মিয়াসাব বলেন, আমি প্রায় ৩০ শতক জমিতে ঢেঁড়স চাষ করেছি। বৃষ্টিতে আমার জমির সব গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া আমন ধানও পানিতে ডুবে রয়েছে।

Mirsharai4

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমির আমন ধান পানিতে ডুবে রয়েছে। বেশিরভাগ জমির পাকা আমন নুয়ে মাটিতে মিশে গেছে। এছাড়া প্রায় সব এলাকায় বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: ‘আমাগোর সব স্বপ্ন পানিতে ডুবে গেছে’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, দেড় হাজার হেক্টর জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে। কাটার উপযুক্ত ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের জমির আইল কেটে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া যে ধানগুলো এখনো কাটার উপযোগী হয়নি, সেগুলোর কয়েকটা ঘোচা এক সঙ্গে বেঁধে দেওয়ার জন্য চাষিদের বলা হয়।

তিনি আরও বলেন, শীতকালীন সবজির মধ্যে লাল শাক, মুলা শাক, পালং শাকের ক্ষতি হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে লাগানো বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলায় আপাতত ৪৪ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

Mirsharai4

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩ এর বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের ডিজিএম মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ বলেন, আমার এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ১২টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। তিনটি ট্রান্সফরমার নষ্ট রয়েছে। আশা করছি দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

আরও পড়ুন: মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ফুলগাজী বাজার প্লাবিত

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘মিধিলি’র প্রভাবে পুরো উপজেলায় কয়েকটি ঘরের টিন উড়ে গেছে। প্রচুর গাছপালা ও খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ক্ষতির তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা হাতে এলে ডিসি স্যারের কাছে পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় গাছ পড়ে নিহত শিশুর পরিবারকে তাৎক্ষনিক ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

এম মাঈন উদ্দিন/জেএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।