কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা মেলা ভার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৬:২২ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৩

অডিও শুনুন

মাঠে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলান কৃষকরা। কৃষকদের সেই ফসলের রোগ-বালাই দেখার জন্য নওগাঁ জেলায় প্রায় ২৬৩ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু কিছু উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার উদাসীনতার কারণে দোকান থেকে পরামর্শ নিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। যার কারণে সঠিক কীটনাশক প্রয়োগের অভাবে ফসলের অনেক ক্ষতিসাধন হচ্ছে।

বদলগাছী উপজেলার অনেক কৃষকের অভিযোগ, মাসে একবার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার দেখা মিললেও রাস্তা থেকেই চলে যান তিনি। মাঠ পর্যন্ত আর সমস্যা দেখতে যান না।

বদলগাছী উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকরা জমিতে বিজ বপন করেছেন। এসব ফসলের রোগ-বালাই দেখার জন্য উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে ২৪টি ব্লক আকারে প্রতিটি ব্লকে ১ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন, যিনি ফসলের রোগ-বালাই দেখে কৃষকদের উত্তম পরামর্শ প্রদান করবেন। কিন্তু সেখানে কিছু উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরামর্শ না দিয়ে বিভিন্ন কাজের বাহানা দিয়ে কৃষকদের এড়িয়ে চলেন। যার কারণে কৃষকরা তাদের কাছে না গিয়ে এলাকার কীটনাশকের দোকানে যেতে আগ্রহী বেশি। এতে হুমকির মুখে পড়ছে বিভিন্ন ফসল।

বালুভরা ইউনিয়নের কৃষক আলতাফ উদ্দিন বলেন, এবছর শিমের নতুন একটা রোগ আসছে। কীটনাশকের দোকানে গিয়েও আমারা কোনো সমাধান পাইনি। বদলগাছী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে এসে সমাধান দিতে পারেন, কিন্তু তারাও আমাদের এখানে আসেন না।

মিঠাপুর ইউনিয়নের আতিক বলেন, ফসলের কোনো সমস্যা হলে সরাসরি কীটনাশকের দোকানে চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা সব ধরনের সমাধান পেয়ে থাকি, তাই কৃষি কর্মকর্তার কাছে যেতে হয় না।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে বদলগাছীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আলী সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। তবে কৃষকদের সরাসরি কীটনাশকের দোকানে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সময় সাশ্রয় এবং আমাদেরকে না পেয়ে তারা এটা করেন। প্রত্যেকটা মানুষের নিরাপত্তা আছে, আমি রাস্তায় গাড়ি রেখে কৃষকদের সঙ্গে মাঠে মাঠে ঘুরতে পারবো না। প্রতিটা গ্রামে গিয়ে দেখাও সম্ভব না। আমাদের শিডিউল করা আছে কাজের। যদি ফসলের বড় কোনো সমস্যা হয় তাহলে কৃষক সেটি জানালে আমি দেখবো।

বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিসার সাবাব ফারহান বলেন, আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রতিটি ইউনিয়নের ব্লকে ১টি করে গ্রুপ আছে। তারা উঠান বৈঠক করে চলমান যে সমস্যা তার সমাধান দিয়ে থাকেন। কোনো কৃষক যখন আমাদের কাছে পরামর্শ চান প্রথমে আমরা তার জমি পরিদর্শন করে থাকি, কারণ কৃষির যে সমস্যা সেটি মুখে মুখে হয় না, জমি দেখে সেটার পরামর্শ দিতে হবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাঠে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা সব জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু শিডিউলের কারণে যেতে একটু দেরি হলেও তারা সব জায়গায় যান। তবে কৃষকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে মাঠ পর্যায়ে আমরা পরিদর্শন করে তাদের ওপর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষির বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। যদি কোনো উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে থাকেন তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।