জরুরি প্রয়োজনেও মিলছে না বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত যাওয়ার ভিসা

সফিকুল আলম
সফিকুল আলম সফিকুল আলম , জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২৩

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু থাকলেও প্রায় ছয় মাস ধরে এই রুট দিয়ে ভারতে যাওয়ার ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশি নাগরিকরা। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারতীয় ভিসার আবেদনে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট রুট উল্লেখ করলেও অজ্ঞাত কারণে ভিসায় লালমনিরহাটের বুড়িমারি অথবা যশোরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চিকিৎসা, ব্যবসাসহ নানা কারণে ভারত ভ্রমণকারী উত্তরাঞ্চলের নাগরিকদের সুবিধার্থে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা এবং ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু করা হয়। এরপর রংপুর এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ভিসা সেন্টার চালু করে ভারতীয় হাইকমিশন। কিন্তু প্রায় ছয় মাস ধরে বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারতে যাওয়ার ভিসায় বাংলাবান্ধা রুটে অনুমতি পাচ্ছেন না। দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্য আনা নেওয়া হয়। বাংলবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পার হলেই ওপারে ভারতের পশ্চিবঙ্গের অন্যতম বড় শহর শিলিগুড়ি। আর শিলিগুড়ি হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে যাতায়াত সুবিধার জন্য অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট।

jagonews24

মূলত করোনা মহামারিতে দুই বছর বন্ধের পর গত বছরের ৭ এপ্রিল থেকে দেশের অন্য সব চেকপোস্টের মতো বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন দিয়েও ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত চালু হয়। এরপর মাস ছয়েক সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এই রুট দিয়ে অলিখিতভাবে ফের ভিসা প্রদান বন্ধ রাখা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে বাংলাবান্ধা রুট দিয়ে ভারতীয় ভিসা প্রদান চালু হলেও মাস খানেকের মধ্যে আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়।

এই চেকপোস্ট দিয়ে ভিসা চালুর সময় প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ যাতায়াত করতেন। বর্তমানে পূর্বের ভিসায় অনুমতি রয়েছে এমন ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো যাতায়াত করছেন। অলস সময় পার করছেন কাস্টম, ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বন্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় বেশকিছু চা দোকান, হোটেল রেস্তোরাঁ।

স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও। বিশেষ করে কুলি, পরিবহন শ্রমিকসহ অটোরিকশা চালকদের আয়ও শূন্যের কোঠায় নেমেছে। ভিসা জটিলতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণকারীরা। তারা অতিরিক্ত টাকা এবং সময় ব্যয় করে বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা অথবা অন্য কোনো চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন।

jagonews24

পঞ্চগড় জেলা সদরের ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ বাবু বলেন, পঞ্চগড় থেকে রংপুরের তুলনায় ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব কম। কম খরচে অনেক রোগী শিলিগুড়ি গিয়ে চিকিৎসা করান। কিন্তু কেন বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত সরকার ভিসা দিচ্ছে না, এটা বুঝে আসে না। অথচ পাশের লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি অথবা বেনাপোল দিয়ে ঠিকই ভিসা পাওয়া যায়।

স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক আনছার আলী বলেন, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে ব্যাপক মানুষ যাতায়াত করতো। এখন সারাদিন বসে থাকি। সব হোটেল, চা-পানের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের মতো রিকশাচালক আর পরিবহন শ্রমিকরাও সারাদিন বসে থাকেন।

বাংলাবান্ধার পাথর ব্যবসায়ী মাহাবুবুল আলম মন্টু বলেন, বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের অসংখ্য রোগী, শিক্ষার্থীসহ পর্যটকরা এই চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করতেন। কোনো ঘোষণা অথবা কোনো চিঠিপত্র ছাড়াই এই চেকপোস্ট দিয়ে ভিসা বন্ধ করা হয়েছে। সব স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খোলা থাকলেও ভারতীয় ভিসায় আমাদের বাংলাবান্ধা রুটের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

jagonews24

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কুদরত ই খুদা মিলন বলেন, এই চেকপোস্ট দিয়ে চার দেশের মানুষ যাতায়াত করতেন। জমজমাট ছিল বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন। কিন্তু এই রুট দিয়ে ভারতীয় হাইকমিশন কেন ভিসা দিচ্ছে না সেটা বলতে পারছে না কেউ।

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্য হয়। এজন্য এই চেকপোস্ট দিয়ে চার দেশের মানুষ যাতায়াত করেন। এর আগে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়শো মানুষ পারাপার হতেন। বর্তমানে প্রতিদিন ৪০ জনের মতো যাতায়াত করেন। যাদের আগের ভিসায় এই রুট উল্লেখ আছে কেবল তারাই যেতে পারছেন। ভারতীয় নতুন কোনো ভিসায় কেন এই রুট দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই।

রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশের যাত্রীদের ভারত গমন নির্বিঘ্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভিসা আবেদনে কোনো প্রার্থী যেই পোর্ট উল্লেখ করেন আমরা সাধারণত সেই পোর্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও দু-তিনটি পোর্ট দিয়ে যাতায়াতের অনুমোদন দিয়ে আসছি। ভিসা আবেদনের সঙ্গে ফুলবাড়ী পোর্টের বিষয় উল্লেখ থাকলে সেটিরও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।