৩ সন্তান নিয়ে নদীতে মায়ের ঝাঁপ

‘বাচ্চা দুটি ডায়াপার পরে থাকায় বেঁচে গেছে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০২৩

তিন শিশু সন্তান সাহাবীর, আনিকা ও সলেমানকে নিয়ে মা সালমা বেগম যখন নদীতে ঝাঁপ দেন ঠিক তখনই তার বিপরীত পাড়ে ট্রলার থেকে মালামাল খালাস করছিলেন মো. সেলিম ও মো. মাসুদ নামের দুই শ্রমিক। সালমা ও সাহাবীর পানিতে ডুবে গেলেও ডায়াপার পরে থাকায় ভেসে থাকে তিন বছরের আনিকা ও তার ছোট ভাই এক বছর বয়সী সলেমান।

বিষয়টি চোখ এড়ায়নি ওই দুই শ্রমিকের। বাচ্চা দুটিকে ভেসে থাকতে দেখে দ্রুত পানিতে ঝাঁপ দিয়ে দুজনকে উদ্ধার করেন তারা। দ্রুত তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। এভাবেই বেঁচে যায় ছোট্ট এই অবুঝ দুটি শিশুর প্রাণ।

ঘটনাটি রোববার (৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকার কীর্তিনাশা নদীতে ঘটে। দুই শিশু প্রাণে বেঁচে ফিরলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন তাদের মা সালমা বেগম ও বড় ভাই সাহাবীর।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগে পারিবারিকভাবে ভোজেশ্বর ইউনিয়নের পাঁচক এলাকার লোকমান ছৈয়ালের মেয়ে সালমা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকার শাজাহান মাদবরের ছেলে আজবাহার মাদবরের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে সালমা বেগম ও তার স্বামী আজবাহারের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক থাকলেও শাশুড়ি মিলি বেগম, ননদ কলি আক্তার এবং কমলা আক্তারের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল।

শনিবার রাতে এসব বিষয় নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এ ক্ষোভে রোববার সকালে তিন সন্তান সাহাবীর, আনিকা ও সলেমানকে নিয়ে কীর্তিনাশা নদীতে ঝাঁপ দেন সালমা। পরে নদী থেকে আনিকা ও সলেমানকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান দুই শ্রমিক।

খবর পেয়ে নিখোঁজ সালমা বেগম ও তার ছেলে সাহাবীরকে উদ্ধার করতে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও ডুবুরি দল। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা নদীর তলদেশে খোঁজ করেও তাদের সন্ধান মেলেনি। রাত হয়ে যাওয়ায় প্রথম দিনের মতো উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখেন তারা।

আরও পড়ুন: তিন সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলেন মা

শিশু দুটিকে উদ্ধার করা শ্রমিক সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যখন কয়েকজন মিলে বস্তা নামানোর কাজ করছিলাম তখন নদীর ওপারে এক নারীকে তাদের তিন শিশু বাচ্চাকে নিয়ে বসে থাকতে দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পর তাদের আর দেখতে পাইনি। হঠাৎ নদীর মধ্যে দুটি শিশুকে ভেসে থাকতে দেখি। একজন উপুড় অবস্থায় আরেকজন চিৎ হওয়া অবস্থায়। আমি দ্রুত নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উদ্ধার করি। শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে বাতাস দেই। পরে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাই।

‘বাচ্চা দুটি ডায়াপার পরে থাকায় বেঁচে গেছে’

আরেক শ্রমিক মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, সাড়ে ৯টার দিকে আমরা যখন কাজ করছিলাম ওই মহিলাকে দেখলাম তিনটি বাচ্চা নিয়ে একটি জায়গায় বসে আছেন। পরে তিনি আরেকটি জায়গায় সরে গিয়ে বসলেন। তো আমরা কাজে ব্যস্ত থাকায় ওদিকে আর খেয়াল করিনি। দীর্ঘক্ষণ পর নদীতে তাকিয়ে দেখি দুটি বাচ্চা নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। বাচ্চা দুটি ডায়াপার পরা থাকায় বেঁচে গেছে। নয়তো বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। ওরাও ওর মা আর ভাইয়ের মতো ডুবে যেত।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মা ও বড় ছেলে নিখোঁজ আছে। রাত হয়ে যাওয়ায় প্রথম দিনের মতো উদ্ধার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। সোমবার সকালে পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু হবে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পরিবারের কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

বিধান মজুমদার অনি/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।