তিনি আয়া শিক্ষক আবার কেরানি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৩

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় এক শিক্ষক দিয়েই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। শুধু তাই নয় পাঠদানের পাশাপাশি একাই করতে হয় স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পতাকা উত্তোলনসহ সব ধনের দাপ্তরিক কাজ।

শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চ শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি ক্লাসে ১০৪ শিক্ষার্থীর পাঠদান সামলাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এক ক্লাসে গেলে অন্য ক্লাস থাকে ফাঁকা। ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হয় সিদ্ধান্ত মালতীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষক ছিলেন চারজন। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষিকা মোছা. জান্নাতুল আল ফেরদৌস মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। আর দুজন ডেপুটেশনে আছেন। এদের মধ্যে শিক্ষিকা শ্রীমতি মালা রানীকে গোড়াই পাচঁপীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও বিলকিছ জাহানকে আনন্দ বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তি করা হয়েছে।

তিনি আয়া শিক্ষক আবার কেরানি

ফলে সিদ্ধান্ত মালতীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তামান্না ফেরদৌসী একাই সামলাচ্ছেন শতাধিক শিক্ষার্থীকে। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে গিয়ে অলস সময় কেটে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হরিপ্রিয়া জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশনে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছয়টি ক্লাস একজন শিক্ষককেই নিতে হয়। অনেক সময় ম্যাম আমাদের পড়া দিয়ে আবার অন্য ক্লাসে চলে যান। এ জন্য আমাদের পড়া আদায়ের আগেই ক্লাসের সময় চলে যায়। সামনে আমাদের পরীক্ষা, প্রস্তুতিও নেই তেমনটা। শিক্ষক কম থাকায় অনেক ছাত্র অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। কেউ বাসায় প্রাইভেট পড়ে, শিক্ষক না থাকায় আমাদের পড়ালেখার খুব ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি আয়া শিক্ষক আবার কেরানি

অভিভাবক শ্যামল চন্দ্র বলেন, এ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট থাকলেও শিক্ষা অফিস কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে ভর্তি করিয়েছেন। এছাড়া সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। ছাত্র-ছাত্রীরা কী শিখবে আর কী লিখবে কে জানে।

সহকারী শিক্ষক তামান্না ফেরদৌসী জাগো নিউজকে বলেন, একাই শিশু থেকে পঞ্চ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। শিক্ষক সংকটে বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। কেননা দ্বিতীয় তলায় ক্লাস নিতে গেলে নিচতলায় শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খলা করে। একার পক্ষে এক ক্লাস সামলাতে গিয়ে অন্য ক্লাসে নজর রাখা সম্ভব হয় না। তাই দ্রুত শিক্ষক দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি আয়া শিক্ষক আবার কেরানি

জমিদাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক দুজনের সঙ্গে স্কুল উন্নয়নের স্লিপের টাকা আত্মসাৎ ও নানান অনিয়ম করায় স্কুল কমিটির দ্বন্দ্ব হয়। এছাড়া সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরি করে তারা ডেপুটেশনের নামে নিজের পছন্দসই স্কুলে বদলি হয়েছেন। ফলে একজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এক শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানোর বিষয়টি স্বীকার করে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ডেপুটেশনে বদলি হওয়ায় ওই শিক্ষকদের নামে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে স্কুলটিতে শিক্ষা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে শিগগির আরেকজন ডেপুটেশনে শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।