দালালের খপ্পরে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ ভৈরবের ৬ যুবক
পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে যাবেন। তাই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভার ছয় যুবক। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে পথেই স্বপ্নভঙ্গ। লিবিয়ায় যাওয়ার পর থেকে সাড়ে পাঁচমাস ধরে নিখোঁজ তারা। সন্ধান না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। তাদের জীবিত কিংবা মৃত ফেরত চায় পরিবার।
নিখোঁজ ছয় যুবক হলেন- ভৈরব পৌরশহরের কালিপুর গ্রামের মুরাদ মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া (১৮), সিদ্দিক মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক মবিন (২৩), গোলাপ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩২), আকবর আলীর ছেলে শিমুল (১৮), মোশারফ মিয়ার ছেলে আবদুর রহমান (৪০) ও দ্বিন ইসলামের ছেলে রিফাত হোসেন (২৪)। এদের মধ্য চারজন একই বংশের এবং সবার বাড়ি কালিপুর গ্রামে ।
জানা যায়, সেলিম নামের এক দালালের ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। দালাল সেলিমের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী গ্রামে। এপ্রিলে ছয় যুবক একসঙ্গে ভৈরবের বাসা থেকে সেলিমের কথা অনুযায়ী ভিসা লাগানোর পর প্লেনে দুবাই যার। সেখান থেকে এক সপ্তাহ পর তাদের প্লেনে লিবিয়া নেওয়া হয়।
লিবিয়া যাওয়ার আগে ছয়জনের পরিবার প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করে দালাল সেলিমকে তার বাবা ও ভাইয়ের মাধ্যমে দেন। পরে লিবিয়া পৌঁছালে বাকি ৫ লাখ টাকা স্থানীয় ব্যাংকে জমা দেন।
দালাল সেলিম চলতি বছরের ২২ মে ছয়জনকে লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইতালির উদ্দেশ্যে পাঠান। কিন্তু পথেই বোটটি ডুবে যায়। এরপর থেকে ছয়জনই নিখোঁজ আছেন।
এ ঘটনায় নিখোঁজ শিমুলের মা রুবিনা আক্তার বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ আদালতে চারজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- দালাল সেলিমের বাবা মো. ইসলাম (৪৯), ভাই মো. সারোয়ার মিয়া (২২), মো. সাহানুর মিয়া (২০) ও কালিপুর গ্রামের মুনসুর মিয়ার স্ত্রী রেখা আক্তার (২৫)।
নিখোঁজ শিমুলের মা ও মামলার বাদী রুবিনা আক্তার বলেন, এপ্রিলে দালাল সেলিমের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। তখন আমার ছেলেকে ইতালি পাঠাতে ১০ লাখ টাকার চুক্তি হলে আমি নগদ ৫ লাখ টাকা সেলিমের বাবা ও ভাইকে পরিশোধ করি। পরে আমার ছেলেকে দালাল ভিসা লাগিয়ে দুবাই পাঠায়। সেখান থেকে বিমানে লিবিয়া পাঠায়। ২২ মে ডাংকিতে সাগরপথে ইতালি পাঠানোর সময় সাগরে বোটটি ডুবে যায় বলে দালাল সেলিম ফোনে আমাদের জানায়। তবে এ ঘটনার পর আমার ছেলের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই সাড়ে পাঁচ মাস যাবত। ফোনেও পাচ্ছি না তাকে। ছেলে শিমুল বেঁচে আছে কি না মরে গেছে তা জানি না।
রুবিনা আরও বলেন, ঘটনার পর থেকে দালাল সেলিম আর ফোন ধরে না। তার বাবা ও ভাইয়ের কাছে গেলে তারা বলে সেলিমের খোঁজ নেই। সেলিমই বলতে পারবে তারা কোথায় আছে। দেশে থেকে এ বিষয়ে কী করতে পারি। কোন প্রতিকার না পেয়ে আমি বিচার পেতে আদালতে মামলা করেছি।
নিখোঁজ নয়নের বাবা মুরাদ মিয়া বলেন, দালাল সেলিমকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। সে আমার ছেলেকে লিবিয়া নিয়ে ২২ মে ছোট বোটে ২৮ জনকে তুলে ইতালি পাঠাতে গিয়ে সাগরে ডুবে যায় খবর পেয়েছি। কথা ছিল বড় বোটে তাদের পাঠাবে। দুর্ঘটনার পর থেকে আমার ছেলের কোনো খবর নেই। সাড়ে পাঁচ মাস যাবত নিখোঁজ। কোথায় আছে আমার ছেলে জানি না। দালাল সেলিম এখন লিবিয়ায় থাকলেও সে ফোন ধরে না। আমার ছেলেকে জীবিত ফেরত চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দালাল সেলিমের বাবা মো. ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ছেলের কথামতো আমি তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা নিয়েছি। কিন্তু টাকাগুলো ছেলেকে পাঠিয়েও দিয়েছি। আমার ছেলের খবর আমিও জানি না। শুনেছি ছয়জনকে সাগরপথে বোটে ইতালি পাঠানোর সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে তাদের সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নাকি তারা মারা গেছে এ খবর জানি না আমি। আমার ছেলেই এসব ঘটনার খবর বলতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ছয়জনের সঙ্গে ইতালি নেওয়ার কোনো চুক্তি করিনি। সব বিষয় আমি জানি না। ছেলের কথায় তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তবে এ টাকা আমার কাছে নেই। ছয়জনের খোঁজ নেই। আমার ছেলে ফোন ধরে না এতে আমিও চিন্তিত আছি।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, কালীপুর গ্রামের ছয় যুবক লিবিয়ায় নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে শুনেছি। যেহেতু ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এসজে/এএসএম