‘শাক-সবজি কিনেই অবস্থা খারাপ, মাংস কিনমু কেমনে’
অডিও শুনুন
বেতন পাই আট হাজার টাকা। এরমধ্যে ঘরভাড়া দিতে হয় সাত হাজার টাকা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। যেখানে জীবন বাঁচানো কষ্টের সেখানে মাংস কিনবো কীভাবে। ৮০০ টাকা কেজি গরুর মাংস। এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন গার্মেন্টস কর্মী নাসির।
নাসির নারায়ণগঞ্জের বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি চাকরি করেন একটি গার্মেন্টসে। তার বেতন আট হাজার টাকা। সংসারের চাহিদা মেটাতে স্ত্রীও কাজ করেন মানুষের বাড়িতে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যেখানে কোনো রকম সংসার চলে সেখানে মাংস খাওয়া তার জন্য বিলাসিতা।
নাসির বলেন, সবশেষ কবে মাংস খেয়েছি মনে নেই। মাংস তো দূরের কথা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাও কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মতো মানুষের জন্য। বলেন আমরা কোথায় গেলে সমাধান পাবো। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো রকম জীবন চলছে আমাদের। বাজারে এলেই জিনিসপত্রের দাম শুনে মাথা ঘুরে যায়। সবকিছুই নাগালের বাইরে চলে গেছে।
আরও পড়ুন: ভারতে দাম বেঁধে দেওয়ার খবরে একদিনেই ২০ টাকা বাড়লো পেঁয়াজের দাম
একইভাবে সাইফুল ইসলাম নামে আরেক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, আমার তো শাক-সবজি কিনতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মাংস কিনমু কেমনে। গরু আর খাসির মাংস এগুলো বড় লোকের খাবার। এগুলো আমরা কিনতেও পারি না খাইতেও পারি না।
দিগুবাবুর বাজারে মাংস কিনতে আসা নারায়ণগঞ্জ শহরের বালুরমাঠ এলাকার বাসিন্দা মো. কেরামত আলী মাদবর বলেন, দুমাস আগে মাংস কিনেছিলাম। আজকে বাজারে এসে এক কেজি ৬০০ গ্রাম মাংস কিনেছি। ৭৫০ টাকা করে এক হাজার ২৩০ টাকা হয়েছে। আগে প্রতি সপ্তাহে একবার খাওয়া হতো। এখন দুমাস পর মাংস কিনতে এসেছি।
কেরামত আলী আরও বলেন, ছোট নাতি-নাতনিরা মাংস খেতে চায়। কিন্তু কেনার তো সামর্থ্য নাই কিভাবে কিনবো। তারপরও কিনতে হয়। এখন আর আগের মতো মাংস খাওয়ার সুযোগ হয় না।
নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রধান দিগুবাবুর বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা মাসুম বলেন, দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিস্থিতি ভালো না। বেচাকেনা নাই। কে কারটা কিনবে। আগে গরু বিক্রি করছি ৫-৬ টা। এখন একটা গরু বিক্রি করতেই কষ্ট হয়ে যায়। ব্যবসা বাণিজ্যের পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
আরও পড়ুন: আলু-পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে পারছে না কেউ
তিনি আরও বলেন, আগে বেচাকেনা থাকার কারণে দোকানে কর্মচারীর সংখ্যাও ছিল বেশি। এখন কর্মচারীর সংখ্যাও কমে গেছে। মানুষের কোনো আয় নেই। মানুষ কিভাবে মাংস কিনবে।
একইভাবে গরুর মাংস বিক্রেতা মাহমুদ হোসেন বলেন, আগে দিনে ৫ টা গরু বিক্রি করছি। এখন একটা বিক্রি করতেই রাত ১২টা বেজে যায়। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। কাস্টমার আসে না। মানুষের হাতে টাকা নাই। মাংসের মধ্যে কিছু অংশ আছে যেটা কম দামে পাওয়া যায়। সেটাই গরিব মানুষরা কিনে নিয়ে যায়। কি করবে তাদেরও তো মাংস খেতে মন চায়। তাই কম দাম দিয়ে উচ্ছিষ্ট অংশ কিনে নিয়ে যায়।
দিগুবাবুর বাজারের মাংস বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে এই বাজারে মাংস বিক্রি করে আসছি। প্রথম খাসির মাংস বিক্রি করতাম। তখন খাসির মাংস বিক্রি করতাম ৩ টাকা সের। আর গরুর মাংস ছিল দুই টাকা সের। আর এখন মাংসের দাম কোথায় চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগে ৪ থেকে ৫ টা গরু বিক্রি করতাম। বৃহস্পতিবার ৭ থেকে ৮ টা বিক্রি করতাম। এখন একটা গরু বিক্রি করি। বেশি হলে দুইটা গরু বিক্রি করতে পারি। আগে দোকানের কর্মচারীরা এক হাজার টাকা পেতো। এখন ৬ থেকে ৭০০ টাকা পায়। দিন দিন মানুষের মাংস কেনার সাধ্য কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের এখন না খেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে আসছি। যদি কোনো ব্যবসায়ী অযৌক্তিকভাবে কোনো কিছুর দাম বেশি রাখেন তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। একই সঙ্গে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে সে অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/জেএস/এমএস