নিহত কৃষক দল নেতার মা

‘সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে কোলে নেই, পুলিশ ছিনিয়ে নেয়’

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৩:০৯ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
নিহত বিল্লালের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত দুই নেতার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। দুজনের হত্যার বিচার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

নিহত দুজন হলেন- কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়নের বড় ছয়সূতি এলাকার চা দোকানি কাউছার মিয়ার ছেলে ও চার নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ (২২) এবং একই ইউনিয়নের মাধবদী এলাকার কাজল মিয়ার ছেলে ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সদস্য বিল্লাল হোসেন (৩০)।

রেফায়েতের মরদেহ ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর বিল্লালের মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে।

আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ২

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে বিএনপির ডাকা তিনদিনের অবরোধ শুরু হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নে আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলেও সড়কে মিছিল করেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে।

‘সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে কোলে নেই, পুলিশ ছিনিয়ে নেয়’

বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে কৃষক দল নেতা বিল্লাল হোসেন ও ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ নিহত হন।

নিহত বিল্লালের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার ছেলে বিল্লাল ঘুম থেকে উঠে সকালেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিছু সময় পরই শুনলাম ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির মিছিলে নাকি পুলিশ গুলি চালাইছে। সেই গুলিতে নাকি আমার ছেলে মারা গেছে। এ খবর শুনে বাড়ি থেকে দৌড়ে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমার সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে কোলে তুলে নেই। আমার কাছ থেকে ছেলের মরদেহ পুলিশ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমার ছেলেকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলে হত্যাকারীদের বিচার চাই।

নিহত বিল্লালের স্ত্রী আন্না বেগম বলেন, খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান স্বামী। পরে লোকজন দৌড়ে এসে বললো মিছিলে নাকি আমার স্বামীরে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।

‘সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে কোলে নেই, পুলিশ ছিনিয়ে নেয়’

এদিকে নিহত রেফায়েত উল্লাহর বাবা চায়ের দোকানি কাউছার মিয়া বলেন, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ডে যায় আমার ছেলে। সেখানে সে মিছিল দেখতে গিয়েছিল। হঠাৎ পুলিশ সেই মিছিলে গুলি চালালে ছেলেটা মারা যায়। আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।

নিহত রেফায়েত উল্লাহর ফুফু ফারজানা বেগম বলেন, পুলিশ নাকি জনগণের বন্ধু। কিন্তু সেই পুলিশের হাতেই আমার ভাতিজার প্রাণ গেলো। এখন আমরা জনগণ কার কাছে ভাতিজার বিচার চামু।

ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রোকন উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার নাম রেফায়েত উল্লাহ। বয়স ২০ বছর। তার বাড়ি উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়ন বড় ছয়সূতী গ্রামে।

‘সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে কোলে নেই, পুলিশ ছিনিয়ে নেয়’

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, বিল্লাল হোসেন (৩০) নামে একজনের মরদেহ হাসপাতালে এনেছে পুলিশ। এছাড়া একজন আহত ব্যক্তিকেও আনা হয়েছে।

কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ সময় পুলিশকে মারতে এলে তখন আত্মরক্ষায় গুলি ছুড়লে দুজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি।

দুপুর ১২ টার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ কুলিয়ারচরের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এসকে রাসেল/রাজীবুল হাসান/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।